এই কবিতা অমৃতাকে ভালো রাখার একটা মাধ্যম

অমৃতা গুপ্তা
১
একটা বাড়িই সবার ছিল
বাবা কাকা মা জেঠিমা
সবাই সবার জন্য ছিল,
—-সেই একটা সময় ছিল।।
বাথরুমের ঐ চৌবাচ্চা য়
ভাড়ি এসে জল দিতো –আর
একতলাতে কুয়োর পাড়ে
কাপড় কাচার হিরিক ছিল।।
এক থালেতে ভাত মেখে তা
খাইয়ে দেবার রেওয়াজ ছিল,
গুনতি মাংস,ছোট্ট মাছ আর
হাফ ডিমেতেও হাসি ছিল।।
আহা সেই একটা সময় ছিল—
ভাই বোনেদের খুনসুটি আর
রাগ অভিমান ঝগড়া ছিল,
লোডশেডিং এর অন্ধকারে
হ্যারিকেনের আলো ছিল।।
একসাথে সব পড়তে বসা
একসাথে সব খেলতে যাওয়া
মাদুর পেতে ছাদের মাঝে
রাতের আকাশ চেনা ছিল।।
আহা সেই একটা সময় ছিল।।
হারিয়ে গেছে সময় গুলো
হারিয়ে গেছে ছোটবেলা ,
একান্নবর্তী নামটা আজ
অনেকেরই খুব অচেনা।।
তোমার আমার এই দুনিয়া
ভীষণ রকম একা আজ,
নিউক্লিয়ার এই ফ্যামিলিতে
সবাই আমরা নিউক্লিয়ার।।
২
আমাকে কি সত্যি ভালোবেসেছিলে?
সত্যিই কি চেয়েছিলে হাত না ছাড়তে?
কংকালীতলার পুজোর মন্ত্র
আর সিঁদুরের টিকাতে
কোনো অঙ্গীকারই কি ছিল না সেদিন?
কোপাই এর ধারে দাঁড়িয়ে
কপালের চুল গুলো সরাতে গিয়ে
যখন তোমার চোখের কোণে
চিকচিক করে উঠেছিল ভালোবাসা —
তোমার হাতের উষ্ণতা
যখন ছড়িয়ে পড়েছিল আমার শরীরে—
অস্তায়মান সূর্যকে সাক্ষী রেখে—
রেলগাড়ির আওয়াজ ছাপিয়ে
চিৎকার করেযখন বলেছিলে
“হারিয়ে ফেলে আবার পেয়েছি যাকে
তাকে ছাড়ি কি করে ???? “”
আমি বলতে পারিনি কিছু,
রাঙা আলোর শেষ রেশ
শরীরে মনে নেশা ধরিয়েছিল আমার।।
জানো
সেদিন জগত সেরা সুখী
মনে হয়েছিল নিজেকে।
মনে হয়েছিল —
নাঃ ,আর মন খারাপের
সকাল হবে না কোনোদিন—
কুড়িয়ে নিয়ে যত্ন ভরে
রেখেছিলাম সেই সব
আকাশ- সূর্য -রাঙা আলো,
মন্ত্র চন্দনে মেশা মোহান্ধ মুহূর্ত গুলোকে—-
সেসব আজ ছড়িয়ে দিয়ে এলাম
তোমার পথের পাশে–
যদি কোনোদিন ফুল ফোটে সেখানে—
যদি কোনোদিন তার গন্ধে
মনে পড়ে যায় কোপাই নদীর কথা
সেদিন তবে আমার কথা ভেবো।
জানবে আজও মন খারাপের সকালে
কেউ তোমার কথাই ভাবে।।
৩
কথা হয় তবু
অদেখাই বারোমাস।।
#
ডিজিটালের ব্যস্ত জীবনে
প্রেম আসে যায় স্ক্রিনে,
সবুজ আর নীল বাতির ইঙ্গিতে
চলে নিভৃত আলাপন।
#
পাওয়া না পাওয়ার
জমে থাকা মেঘ
বৃষ্টি নিয়ে আসে
ঐ মুঠো ফোনের কাছে—–
#
রাতের সাথে ঘুমায় যখন শহর
চোরা মন শুধু জেগে থাকে
সবজে আলোর সাথে
তোমার আমার বেডরুমে।।
#
কত শত স্বপ্ন বুনে
জেগে ওঠা মনে জাগে
ভালোবাসার শিহরণ,
হারিয়ে যেতে বসা “আমি” কে
বাঁচিয়ে তোলে মন মাতানো
আঙুল চালানো কিছু বুলি।
#
সংসারের ঘানি টেনে যখন
চোখের নীচের কালি
লুকোনোর সময় আসে—-
তখন ই এই নীল আলো র
ওপারে কেউ – জানিয়ে যায়
হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা র দাবি।।
#
নিজেকে
ভালোবাসতে ইচ্ছে করে তখন
আর
জেগে থাকে অব্যক্তেরা
নীলচে জগতে
আজকের ডিজিটালে।।।
৪
শহরের বুকে ছড়িয়ে আছে আকাশ ,
জলে ভেজা মনে আজ
পুরোনো স্মৃতির আনাগোনা—-
আকাশ ভাঙা বৃষ্টির শব্দে–
প্রথম চুমু খাওয়া র নিষিদ্ধ আয়োজন
মিলেমিশে একাকার হয়েছিল একদিন।
বৃষ্টি র ছাঁটে রবি ঠাকুরের গান
কথা বলেছিল — কোনো এক
বেসুরো প্রেমিকের গলায়।
প্রথম ছোঁয়া র কম্পন আজ
চোখের কোণায় চিকচিক করছে
দ্যাখো—-বৃষ্টি তোমার জন্য।
বৃষ্টি——-
তুমি প্রেমের পথিকৃত
ভালোবাসার নিবিড় ঘন আলিঙ্গন ,
কিংবা , হঠাৎ করে
ওলটপালট করা আঠেরোর স্পর্ধা ।
৫
রোববার রোদ্দুর
ঝলমল চারিদিক
হালকা শীতের আমেজ
মন আজ ঝিকমিক।।
হুল্লোড় দূরে থাক
নির্জনে বুঁদ মন
গাড়ি ছোটে হু হু ঐ
খোলা মাঠ ফাঁকা রোড।।
গানে আজ রবি সুর
হাতে ধূমায়িত কাপ ,
একা হয়েও একা কই
এই আমি বেঁচে থাক। ।
একা লাগে যদি কভু
ভেবো নাকো একা নিজে,
গান- বই – খুড়ি চা–
বেঁচে নিও এ জীবনে। ।
অমৃতা গুপ্তার পড়াশুনা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে।
পেশায় স্কুল শিক্ষিকা।
জীবনযুদ্ধের মধ্যেই অভিজ্ঞতা সঞ্চার।
ছোট্ট থেকে মনের ভাব প্রকাশ করেছে এই কবিতার মাধ্যমে আর —এই কবিতা অমৃতাকে ভালো রাখার একটা মাধ্যম।