শিল্পাঞ্চলের বিশিষ্ট কবি প্রকাশ ঘোষালের কবিতা

১.
ছায়ার আর্তনাদ
ছায়ার আর্তনাদ শুনলে চোখ বাঁধানো বরফের কথা মনে পড়ে
আজকাল দৃশ্যরাও সব রূপান্তরকামী ।
যে কোন প্রচ্ছদে মানানসই।
শেয়ালের পিঠে চড়ে শূন্যরা বেড়াতে যায়।
মূর্খবাদ কতটা কঠিন এ দেশ আজও শিখলো না।
কফি হাউসের ভেতর
বিবর্ধক কাচেরা জ্ঞানবৃক্ষের ফল খেয়ে রবীন্দ্রভবন পেরিয়ে যায়
বাথরুমে ঢেঁকুর তোলে সারারাত
আর মাঝরাতে মশারীর কৌণিক বিন্দুর মাথায় একটা মুন্ডুহীন শরীর
দীর্ঘ শ্বাসের হাওয়ায় উড়তে থাকে।
২.
পায়রা ছাড়া পিয়ানো
উত্তীয় পরার পর তিনি জীবন্মৃত শব্দটাকে দাঁতে ছিঁড়ে ফেললেন।
চোয়ালে ঝুলে রইল এক স্বাস্থ্যপ্রেমিক
জীবন ও চাঁদের দ্রবন
আর মৃত শব্দটি ছিটকে পড়ল রাস্তায়
চিবিয়ে খাওয়ার কয়েকটা নির্বাচিত শব্দ আছে কবিতার সংসারে
মন্দির মসজিদ গীর্জার ভেতরেও কিছু বায়োমেট্রিক পথ আছে
মৃতদের অবশ্য কোন নকশিকাঁথা নেই।
পায়রা ছাড়া পিয়ানোর গান।
সারাজীবন শুধু সাঁকোহীন এপার ওপার
৩.
দিনযাপন
ভোরবেলা ঈশ্বরের কাছে বসে
আমি স্বপ্নের প্রবাহমাত্রা আর সাইরেনের কথা ভাবি
সর্বনামের শেষটুকু কিছুতেই আর শেষ হয় না।
স্বয়ংক্রিয় পৃথিবীর অক্ষরেখা সরে গেলে
দেয়ালের নির্জনতা ইচ্ছেমতো ভেসে যায় ব্রহ্মাণ্ডের দিকে।
অ্যালবামে আশ্চর্য এক জলের ছায়া
এখন দুপুরে গোলমরিচ আর
সন্ধেবেলায় তুমি বিনা প্রেম হয় কি গো রাই।
৪.
আশ্চর্যের টিকিট
যেভাবে কথা বললে মানুষ সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে
সেভাবেই বলো তুমি
গাল-গপ্পের বয়স ক্রমশ বাড়ছে।
কুয়াশার ইস্কুলে আর বাচ্চাদের পাঠিয়ো না
দ্যাখো পাঁচশো দিন পেরিয়ে গেল মৃত্যুর ক্লাশ আজও চলছে রমরমিয়ে
খিদে আর শিক্ষা আজকাল খুব বেমানান।
মোমবাতি ছাড়াই একটা শহর কিভাবে এগিয়ে চলেছে উন্নয়নের দিকে
সহস্র রজনীর পর একদিন ঠিক
খুলির পিরামিড তৈরি হবে ধর্মতলায়
আশ্চর্যের টিকিট কেটে আমরা সবাই দেখতে যাব উপমান উপমেয়র সভ্যতা
তুমি এসো
৫.
অবৈধ অক্ষর
নিভন্ত উনুনের পাশে মাসকাবারি অক্ষর আর নাটকের শেষ দৃশ্য সাজিয়ে রাখি।
কুয়োর অনেক নিচে কবেকার সেই প্রপিতামহের স্বর শ্রমদিবসের ঘাম
শ্যাওলার ক্লাশ ছেড়ে ছুটে যাই রেললাইন বরাবর
ছাল চামড়া থেকে মাঝে মাঝে যে বিদ্যুৎ ছোটে
তার ভাষা রাষ্ট্র আজও শেখেনি।
দারিদ্র্যপীড়িত লাইনে দাঁড়িয়ে
কেন যে চাঁদমামা ডেকে আনি রামসায়রের জলে।
দিলদার রক্তপাতের পর
অবৈধ অক্ষরগুলো মাঝরাতে শুধু শুধু চিৎকার করে।
৬.
কাকাতুয়া চাই
সূর্যাস্তের প্রতিবেদন শুনে গাছেরা আকাশপথে যায়
সান্ধ্য ভ্রমণের পর বেকুব যতিচিহ্নরা মাথার আঁশ ছাড়াতে বসে
আগামীকালের জন্য একটা সুন্দর কাকাতুয়া চাই।
৭.
নিরঙ্কুশ স্তব্ধতা
এই যে মেঘ ভেঙে ভেঙে যারা প্রতিদিন পোড়া বাজারের দিকে ছুটে চলেছে
তাদের আধার কার্ড ছাড়া আর কি পরিচয়পত্র আছে বলুন
সন্ধেবেলায় ছেলেমেয়েরা আজও লম্বা ছায়ার নিচে গোল হয়ে
অদৃশ্য পাঁচিলের গল্প শোনে।
ওপারে হ্যা-হ্যা হি-হি’র আইসক্রিম
আর মিনি পোশাকের ছবি দেখতে দেখতে কয়েকটা দশক তো এভাবেই পেরিয়ে গেল
অপুষ্টিকর স্বপ্ন ছিঁড়ে একদিন তারা বারুদের দেশে চলেও যেতে পারে।
সত্যি বলছি এই দেশে নিরঙ্কুশ স্তব্ধতার কোন ব্ল্যাকবোর্ড নেই।
প্রকাশ ঘোষাল : শিল্পাঞ্চলের বিশিষ্ট কবি।
