ফেলু কসাইয়ের মসজিদ

ফারুক আব্দুল্লা :- কথিত রয়েছে নবাবী আমলে মুর্শিদাবাদ নগরীতে প্রায় ৭০০ মসজিদ ছিল।এই জন্যই মুর্শিদাবাদকে বলা হত মসজিদ নগরী।শুধু নবাব,বেগম সহ বহু উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরাই নয়,এই নগরীতে সাধারণ ব্যাবসায়ীর মসজিদ তৈরীর নিদর্শন ও রয়েছে।এমনই একটি মসজিদের নাম ফেলু কসাইয়ের মসজিদ বা উধড়িওয়ালা মসজিদ নামে পরিচিত।মসজিদটি মুর্শিদাবাদ শহরের নিজামত আস্তাবল ভবনের কিছুটা দূরে ঠিক উত্তর-পশ্চিম কোনে অবস্থিত।
প্রাপ্ত লিপি অনুযায়ী মসজিদটি নবাব আলিবর্দি খানের শাসন আমলে হিজরি ১১৭৩ এবং ইংরেজি ১৭৫২ সালে মুর্শিদাবাদ নগরীতে বসবাসকারি ফেলু কাসাব নামক এক কসাই বা মাংশ বিক্রেতা নির্মাণ করিয়েছিলেন।মসজিদ নির্মাতা ফেলু কাসাব এলাকাবাসীর কাছে ফেলু কসাই নামেই অধিক পরিচিত ছিল।তাই তার তৈরী মসজিদটিও ফেলু কসাইয়ের মসজিদ নামে পরিচিতি পায়। অন্যদিকে আরও একটি প্রচলিত জনশ্রুতি অনুযায়ী ফেলু কসাই নাকি মাংস নয়, তিনি নাকি মৃত পশুর নাড়ি বিক্রি করা টাকায় এই মসজিদ তৈরী করেছিলেন।উর্দুতে নাড়িকে বলা হয় ‘উধড়ি’ তাই এই মসজিদের অপর নাম উধড়িওয়ালা মসজিদও।যাদের মাংস কেনার সামর্থ্য ছিলনা সেই সমস্ত অভাবী মানুষদের প্রোটিনের উৎস ছিল এই সমস্ত মৃত পশুর নাড়ি।যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘Intestine’।শুধু ভারতীয় উপমহাদেশেই নয়,পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তেই এই নাড়ি খাওয়ার চল ছিল এবং এখনও রয়েছে।উনিশ শতকে লেখা দুটি বাংলা রান্নার বই ‘পাক রাজেশ্বর’ এবং পাক প্রণালীতেও এই নাড়ি রান্নার পদ্ধতি লেখা রয়েছে।একসময় সমগ্র পৃথিবী জুড়েই এই নাড়ি ‘সাধারণ মানুষের সাধারণ খাবার’ হিসেবে পরিচিত ছিল।
ফেলু কসাইয়ের নির্মিত মসজিদটি ছোট আকারের এবং তিন গম্বুজ বিশিষ্ট।যদিও বর্তমানে এই প্রাচীন মসজটির মুল অংশ অপরিবর্তিত রেখে প্রয়োজনের সার্থে মসজিদটির পরিধি বৃদ্ধি করা হয়েছে।মসজিদের গায়ে ফার্সি ভাষায় লেখা একটি পাথুরে লিপি রয়েছে।সেখান থেকেই মসজিদটি সম্পর্কে কিছু ধারনা পাওয়া যায়।
এই লিপিতে ফার্সি ভাষায় লেখা আছে
“কুর্দ এহদাস মসজেদে যেবা
বেহতেরো মেহতার যেরাহে সেদকত সাফা
য়াফত আনজাম চুন যে লুফত এ এলাহ
অকল এ দাদ ইন সালাত খানা নেদা”
১১৭৩ হিজরি
অর্থাৎ,’ নির্মিত মসজিদটি খুব সুন্দর।এটি তৈরী হয় ভাল,মহৎ,সত্য এবং পবিত্র মনে।
যখন আল্লাহ’র করুনাতে মসজিদের নির্মাণকার্য শেষ হয় তখন গুণীজনেরা বলে এটি প্রার্থনা ভবন’।
১১৭৩ হিজরি