রণগ্রাম ব্রিজ ও গণসংগ্রাম মঞ্চ

মীর রাকেশ রৌশান
বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়ার জন্য মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, সমাজকর্মী ও মানবাধিকার কর্মীদের মধ্য থেকে দাবি ওঠে জেলার মানুষের বিভিন্ন লড়াই আন্দোলনের পাশে থাকার জন্য একটা সংগঠনের প্রয়োজন। যে সংগঠন মানুষের ন্যায্য অধিকারের জন্য লড়াই করবে এবং মানুষের পাশে থেকে কাজ করবে।আর সেখান থেকেই মুর্শিদাবাদ জেলায় গণসংগ্রাম মঞ্চের পথ চলা শুরু।কৃষক আন্দোলনের শুরুর দিকে গণসংগ্রাম মঞ্চের সাইকেল র্যালি এবং পদযাত্রা জেলার মানুষের নজর কেড়েছিল। সালার থেকে বহরমপুর দীর্ঘ ৬০ কিমি সাইকেল র্যালিতে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে ৮ থেকে ৬৫ বছরের মানুষকে।পাশাপাশি কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে করেছিলো ‘রেল রোকো’,অনশণ কর্মসূচি। শ্রমজীবী মানুষের অসুবিধার জন্য জেলার বিভিন্ন প্রান্তে লোকাল ট্রেন চালুর দাবিতে স্টেশনে স্টেশনে ডেপুটেশন দিয়েছে। এ-র পরের লড়াই রণগ্রাম ব্রিজ।
” গণসংগ্রাম মঞ্চ” অবিলম্বে নতুন সেতু নির্মাণ; সেতু নির্মাণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সমস্ত ধরনের যান চলাচল উপযোগী বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করা ও সমস্ত উৎখাত হওয়া বা হতে বসা পথ ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার দাবিতে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়েছে তাঁরা, সাক্ষাৎ করে আলোচনা করা হয়েছে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
তাই এই লড়াইয়ে সাধারণ মানুষকে একত্রিত করার জন্য গত ৬-ই অক্টোবর’২১ কান্দির পাখমারা ডোবে নাগরিক সমাবেশ আয়োজন করে তাঁরা।সেখানে গণসংগ্রাম মঞ্চের আয়োজনে নাগরিক সমাবেশে উপস্থিত হয় বহু সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ।এছাড়াও বাস মালিক ইউনিয়ন ও কান্দী ব্যবসায়ী সমিতি থেকে বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়ন সেই নাগরিক সমাবেশে উপস্থিত হয়।আর সেই সমাবেশ থেকে সিদ্ধান্ত হয় তারা সিদ্ধান্ত গত ১৭-ই নভেম্বর’২১ পদযাত্রা করবে এবং জেলার বিভিন্ন প্রান্তে পথসভা করে সাধারণ মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে ডিএম মারফত মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্য পাঠাবে যাতে তাড়াতাড়ি রণগ্রাম ব্রীজ তৈরি হয়।সেই মত বিভিন্ন জায়গায় প্রচার,পথসভা, পোস্টারিং,স্বাক্ষর সংগ্রহ করে।তাঁদের উদ্দেশ্য ছিলো কান্দী মহকুমার একটা বৃহৎ অংশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে জিবন্তী থেকে রণগ্রাম ও কান্দী বিশ্রামতলা থেকে রণগ্রাম দুটো ভাগে দুই প্রান্তের মানুষ পদযাত্রা করে রণগ্রামে উপস্থিত হয়ে মানুষের অধিকার দাবি তুলবে।কিন্তু প্রতিটি গণ আন্দোলনের মত এখানে বাধা হয়ে দাঁড়ালো প্রশাসন।
প্রশাসন DM Act এর দোহাই দিয়ে স্তব্ধ করে দিতে চাইল তাঁদের পদযাত্রাকে।ঠিক একই ভাবে রাজ্য প্রশাসন বর্তমান সাংসদ অধীর চৌধুরী পদযাত্রারও অনুমিত দেয়নি।কিন্তু গণসংগ্রাম মঞ্চ সাময়িক ভাবে পদযাত্রা স্থগিত রাখলেও সেদিন জিবন্তী ও গোকর্ণে পথ সভা করে । তারপর রণগ্রাম ও কান্দী বাসস্ট্যান্ডে মানব বন্ধন করে।ঠিক তারপরেই কান্দী প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরাতন ব্রীজ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।প্রশ্ন এখানেই, যে ব্রীজের অবস্থা ভালো নেই বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্ধ করা হয়েছিলো, সেই ব্রিজ রাতারাতি ভালো হয়ে গেলো কি করে? ২৭-শে নভেম্বর গণসংগ্রাম মঞ্চ বহরমপুরে একটি প্রেস মিট করে।সেখান থেকে গণসংগ্রাম মঞ্চের আহ্বায়ক কমিটির আশীষ পাত্র ও মিলন মালাকার দাবি করে পুরাতন ব্রীজে বাস চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, তাই অতিদ্রুত যেন নতুন ব্রিজ কাজ সম্পূর্ণ ও বিকল্প রাস্তা চালু করা হয়।এছাড়া তাঁরা তিনটি দাবির কথা বলেন
১. অবিলম্বে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আপাতভাবে সমস্ত গণপরিবহন ও সাধারণ মানুষের অবাধ যাতায়াতের জন্য বিকল্প একটি রনগ্রাম সেতু তৈরি করতে হবে।
২. দীর্ঘসূত্রতায় আটকে না রেখে স্থায়ী সেতু তৈরীর কাজ অতি দ্রুততার সাথে অবিলম্বে শুরু করতে হবে।
৩. এই সেতু তৈরীর জন্য ঐ এলাকায় ৫৬ জন হকারেরে জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের অবিলম্বে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে সমস্ত দিকটা ভেবে পুনর্বাসন ও অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
এরপরের কর্মসূচি ছিল তিন দিনের ধারাবাহিক অনশণ সেটাতেও বাধা হয়ে দাঁড়ালো প্রশাসন। তাই বিগত ২৭ শে নভেম্বর তাঁরা রণগ্রামে পথসভা করে।এই আন্দোলন আর রণগ্রাম ব্রীজ কত তাড়াতাড়ি সুরাহা হবে তা ভবিষ্যৎ বলে দেবে।তবে খুব শীঘ্রই কান্দী পৌরসভার ভোট আর একদিন বিরোধী রাজনৈতিক দলের চাপ এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন গণসংগ্রাম মঞ্চ যেভাবে রণগ্রাম ব্রিজ নিয়ে আন্দোলন করছে তাতে রাজ্যপ্রশাসন অনেকটাই চাপে আছে এইটুকুই বলতে পারি।
মীর রাকেশ রৌশান : কবি,প্রাবন্ধিক ও সমাজকর্মী
3 Comments
অধিকার আদায়ের জন্য যে যে সাথীরা আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন, তাঁদের সকলকে অভিনন্দন। লেখককে শুভেচ্ছা এমন একটি বিষয় তুলে ধরার জন্য।
ধন্যবাদ দাদা
গণসংগ্রাম মঞ্চকে অভিনন্দন