সৈফুদ্দিন থেকে সেলিম-একটি বৃত্ত সম্পূর্ণ হল

অভিষেক মুখোপাধ্যায়
সিপিআই এর নেতারা কেন্দ্রীয় স্তরে বেশ কিছু বার দেখেছি প্রস্তাব দিয়েছেন যে সিপিআইএম সিপিআই দুই দল এক হয়ে যাক।কারণ তাঁদের মতে নীতি-আদর্শ রণনীতি কৌশল কোনো কিছুতেই যখন দুই দলের মধ্যে পার্থক্য নেই তখন এরকম এক সঙ্কটজনক সময়ে এক হলেই তো স্বাস্থ্য ভালো হবে।কোনো স্পষ্ট উত্তর না দিলেও ভঙ্গী দেখে বোঝা যায় সিপিআইএম দলের অবস্থান এই প্রশ্নে নেতিবাচক।
কারণটাও খুব সহজে অনুমেয়।কোনো রকেটসায়েন্স নেই।আজ যদি দুই দল এক হয়ে যায় তবে তাতে সিপিআইএর কোনো ক্ষতি নেই।কিন্তু সিপিআইএম দলকে নিজের জন্মকেই তাহলে প্রথম অস্বীকার করতে হয়।কারণ আজ সিপিআইএমের সাথে কংগ্রেসের সম্পর্ক যতই মধুর হোক না কেন ষাটের দশকে সিপিআই কংগ্রেসের মত বড় বুর্জোয়াদের পার্টির সাথে মিলে ও আঁতাত গড়ে বিপ্লবের রাস্তায় চলছে না এবং পুরোদস্তুর একটি পার্লামেণ্টারী সংশোধনবাদী পার্টি হয়ে গেছে-বিপ্লব করতে গেলে কংগ্রেসের সাথে আঁতাতের রাস্তা ছেড়ে পার্লামেণ্টের বাইরের লড়াইই জোরদার করতে হবে এই যুক্তি থেকেই পার্টির বিভাজন এবং সিপিএমের জন্ম।আন্তর্জাতিক স্তরে সোভিয়েত-চীন বিতর্ক, ভারত-চীন যুদ্ধ এসব নিশ্চয়ই ছিল কিন্তু মূল বিতর্কটি ছিল কংগ্রেসের সাথে সম্পর্ককে ঘিরেই।
দুই দল এক হলে জন্মেই যে ভুল ছিল তা প্রথম বলতে ও স্বীকার করতে হয়।
কংগ্রেসের সাথে জোট কি জোট নয়-স্বাধীনভাবে পথ চলা এই নিয়ে সিপিআইএম দলে এই যে এত বিতর্ক তার রহস্যটা কি?এখানেও কোনো গডপার্টিকল নেই।কারণ ঐতিহাসিকভাবে সিপিআইএম দলের শুধু নয়,এদেশের বাম আন্দোলনের সামগ্রিক যাত্রাপথটিই থেকেছে মূলত কংগ্রেসবিরোধিতাকে কেন্দ্র করে।কংগ্রেসী কুশাসনের বিরুদ্ধে বিকল্প সরকার-মূলত ভাষ্য থেকেছে এটাই।সেই বিকল্প সরকার অর্থনীতি ও রাজনীতির ক্ষেত্রে কি পার্থক্য নিয়ে আসবে তার কোনো সমান্তরাল ভাষ্য কোনোদিনই খুঁজৈ পাওয়া যায় নি।আজ যখন কৃষক আন্দোলনে কংগ্রেসও এমএসপির দাবী করে এবং বামেরাও তাই; সোস্যাল ওয়েলফেয়ার থেকে আংশিক ভূমি সংস্কার কোনোকিছুতেই কংগ্রেসী ন্যারেটিভের সাথে সংসদীয় বামের ন্যারেটিভের বিন্দুমাত্র পার্থক্যও কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।স্বাভাবিক নিয়মে তাই নব্বই প্রারম্ভে কংগ্রেস যখন নয়াউদারনীতির দিকে যাত্রা শুরু করে সংসদীয় বামেরাও বাজার অর্থনীতির মধ্যে সমাজতন্ত্র আবিষ্কার করতে থাকে।
সেলিমসাহেব সৈফুদ্দিনের শিষ্য।যে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা সফিসাব বা সৈফুদ্দিনকে সিপিআইএম দল একদিন বিতাড়িত করেছিল কারণ সৈফুদ্দিন কংগ্রেসের সাথে জোটের পক্ষে ছিলেন এবং দলের অভিযোগ ছিল তিনি যথেষ্ট কট্টরপন্থী ছিলেন না।
ইতিহাসের একটা বৃত্ত পূর্ণ হল।
অভিষেক মুখোপাধ্যায় : রাজনৈতিক কর্মী।
