• March 25, 2023

লকডাউনের ভবিষ্যৎ

 লকডাউনের ভবিষ্যৎ

মধুরিমা দাস

মোদী সরকার দ্বারা লাগুকৃত প্রথম লকডাউন জনগনের গন্তব্য পরিবর্তনের একটি বড় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে। জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের তত্ত্বাবধানে পর্যায়ক্রমিক শ্রমবাহিনীর সমীক্ষা দ্বারা প্রকাশিত তথ্য এই বিষয়টির প্রমানকে মান্যতা প্রদান করেছে।

“ভারতে অভিবাসন ২০২০-২০২১” শিরোনামের একটি প্রতিবেদনে সমীক্ষাটি, জুলাই ২০২০ থেকে জুলাই ২০২১ এই এক বছর সময়ের মধ্যে অভিবাসন এবং অভিবাসীদের অবস্থার একটি বিবরণ তুলে ধরেছে৷ সমীক্ষাটিতে মোট ১,১৩,৯৯৮ অভিবাসীদের ক্ষেত্রমাপ করা হয়েছে। লক্ষ্য করার বিষয় এই যে ৫১.৬% গ্রামীণ অঞ্চলে বসবাসকারী জনগন মহামারীর পরে শহরাঞ্চল থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে।এই পরিসংখ্যানটি অভূতপূর্ব বেকারত্বের সংকটকে প্রমাণ করে যা প্রথম লকডাউনের পরের মাসগুলিতে যন্ত্রণাদায়ক ভাবে চূড়ান্ত পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।

লকডাউনের পর সরকারের তরফ থেকে বেকারত্বের পরিসংখ্যান ও সঙ্কট বিষয়ে তথ্য প্রদান না করা হলেও, CMIE এর মতো নির্ভরযোগ্য বেসরকারি সংস্থা তাদের সমীক্ষা দ্বারা প্রাপ্ত তথ্য প্রদান করে বিষয়টিকে সর্বসম্মুখে তুলে ধরেছে। CMIE এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে গ্রামে এবং শহরে মোট ১২২ মিলিয়ন মানুষ চাকরি হারিয়েছে। সাধারান মানুষের চাকরি খোয়ানোর এই পরিসংখ্যান, FY21 এর প্রথম ত্রৈমাসিকে নথিভুক্ত করা জিডিপি ডেটার সাথে মিলে যায় যা তুলে ধরে কিভাবে আনুসঙ্গিক, অপ্রধান ছোট প্রশাখা যুক্ত শিল্পগুলি ধসে পড়েছে যখন একই সাথে, একই সময়ে কৃষিক্ষেত্র গুলির অগ্রগতি ক্রমবর্ধমান ছিল।লক্ষ্য করার বিষয় এও যে পরিসংখ্যান অনুযায়ী শহরে আগত মোট পরিযায়ী শ্রমিকের মাত্র ১১% মহিলা।কারণ, ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় মূলত পুরুষরাই কাজের তাগিদে শ্রমিকের কাজ করতে শহরে যায়। প্রথম লকডাউনের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া স্বরূপ বেকারত্বের বৃদ্ধি নিয়ে অরুপ মিত্র ও জিতেন্দর সিং একটি অর্থনৈতিক গবেষণা কর্ম ওয়েব পোর্টাল ‘আইডিয়াস ফর ইন্ডিয়াতে’ প্রকাশিত হয়েছে।গবেষণাপত্রটিতে জানুয়ারি-মার্চ ২০২০ এবং এপ্রিল-জুন ২০২০ সময়কালে ১৫ বছর ও তার ঊর্ধ্বসীমার লোকেদের শ্রমশক্তি, কর্মশক্তি ও কর্মহীন হওয়ার বিষয়টির খসড়ার উপর আনুমান করে নির্মিত ।

মিত্র এবং সিংয়ের গবেষণা অনুযায়ী ১২৮ মিলিয়ান লোক করোনা কালের প্রথম লকডাউনের আগে শ্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে আনুমানিক ৭ মিলিয়ান লোক প্রথম লকডাউনের সময় শ্রম থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

চিন্তার বিষয় এই যে, করোনা কালে কর্মজীবন ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে মহিলারাই অনেকাংশে এগিয়ে আছে। ১৪০ মিলিয়ান শ্রমজীবী পুরুষের তুলনায় স্বল্প হলেও, প্রায় ৪০ মিলিয়ান মহিলা শ্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিল। লকডাউনের পর থেকে ৩ মিলিয়ান পুরুষরা যদি কর্মহীন হয়ে থাকে তাহলে মহিলারা কর্মহীন হয়েছেন ৪ মিলিয়ান।
গবেষণা অনুযায়ী বলা যায়;
‘ এপ্রিল-জুন ২০২০ মাসের সময়কালে পূর্ববর্তী ত্রৈমাসিকের তুলনায় আনুমানিক শহুরে এলাকায় চাকুরীজীবী হ্রাস পেয়েছে ২৬ মিলিয়ান; প্রধানত ৭ মিলিয়ান মহিলা চাকুরীজীবী মহিলা নিজেদের চাকরী থেকে প্রত্যাহার করেছে, এবং বেকার জনগনের সংখ্যা ২০ মিলিয়ান অবধি বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্ম সংস্থানের অবস্থা পরীক্ষা দ্বারা লক্ষ্যনীয় বিষয় এই যে, সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঠিকা শ্রমিকেরা। শিল্পগোষ্ঠী গুলির ক্ষেত্রে প্রধানত অপ্রধান এবং প্রশাখা ক্ষেত্রগুলি কর্মজীবীদের উপর চাকরি হ্রাসের আঘাত হেনেছিল, কিন্তু তুলনায় কৃষিক্ষেত্র গুলি অনেক বেশি স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল।কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে যে লকডাউনের সময় যে অঞ্চল ভিত্তিক প্রভাব ছিল তা গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে অনেক বেশি প্রভাব ফেলেছিল’।
এই ফলাফলগুলি যুক্তি তর্কের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যা ‘দ্য ওয়্যার’ দীর্ঘকাল ধরে উত্থাপন করে আসছে, অর্থাৎ, মোদীনমিক্স ক্রমাগতভাবে ভারতের অসংগঠিত ক্ষেত্রের শক্তিকে ক্ষয় করেছে নোটবন্দীর কৌশল এবং জিএসটি-এর একটি অপটু প্রয়োগের মাধ্যমে যা প্রথম লকডাউনের সময় বেপরোয়া ভাবে শীর্ষে অবস্থান করছিল।

লকডাউনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে শ্রমিকদের বিপরীতমুখী স্থানান্তর এবং কারখানা থেকে খামারে কর্মসংস্থানের মধ্যে। একটি প্রবণতা যা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে কৃষিতে কর্মসংস্থানের অংশীদারিত্ব FY19 এর ৪২.৫% থেকে FY20 এর ৪৫.৬% বেড়েছে৷ এর পরিধির মধ্যে, ৩ শতাংশ পয়েন্ট স্পাইক আপ প্রায় ১২-১৩ মিলিয়ন শ্রমিকের জন্য দায়ী যারা কারখানায় কাজ করা থেকে স্বল্প মজুরির কৃষি তে চলে যাচ্ছে।

মধুরিমা দাস: ছাত্রী ও রাজনৈতিক কর্মী

Leave a Reply

Your email address will not be published.