অখণ্ড হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের বিস্তারের জন্য চাই দ্বিখণ্ডিত বাংলা

সিদ্ধব্রত দাস
বিগত কাল ছিলো ২০ জুন, সামাজিক মাধ্যমের আলোচ্য বিষয় বাংলা ভাগ।#BENGALSTANDUNITED হ্যাস ট্যাগ ট্রেন্ডিং করছে বাংলাকে ভাগ হতে দেবো না বার্তা নিয়ে। ভোটে পরাস্ত হওয়ার পরেই যেন এই অসংখ্য ক্রমশ দানা বাঁধছে বাংলাকে ওরা ভাগ করে দেবে। এই ওরাটা কে? বর্তমান শাসক হিন্দী সাম্রাজ্যবাদ। বাংলাকে দমন করতে অপারগ হয় বারবার দিল্লী হাতে তুলে এই বেদনাদায়ক রণকৌশল। ওদের ভাগ করে দাও, যাতে ওরা দাঁড়াতে না পারে। ঠিক একই ভাবে আজ থেকে ৭৪ বছর আগে বাংলাকে ভাগ করা হয়েছিল, তৈরি হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিমবঙ্গর নকশা এবং সূচনা হয়েছিল কাঁটা তারের রক্ত মাখা ইতিহাস।
৩ জুন, ১৯৪৭ মাউন্টব্যাটনের করা বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা বঙ্গীয় আইন পরিষদে ২০ জুন পাস হয়। দ্বিজাতিতত্বের ওপর দাঁড়িয়ে ভারত ভাগের কথা আমরা বলে থাকি আদতে হলো বাংলা ও পাঞ্জাব ভাগ। এই ভাগের ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন তৎকালীন বঙ্গীয় কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা ও সুভাষ চন্দ্র বসু বড় দাদা শরৎ চন্দ্র বসু এবং মুসলিম লীগের নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তাদের মত ছিল এতে বাংলার অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙে যাবে। বরং বাংলার স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা উচিত। কিন্তু এই প্রস্তাব একদিকে মুসলিম লীগের একাংশ, অন্যদিকে উত্তর ভারতীয় কংগ্রেস নেতাদের পছন্দ ছিল না। নেহরু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলদের মত ছিল বাংলাকে ভাগ করতেই হবে। আজ ৭৪ বছর পর এটা বললে ভুল হবে না বাংলা ভাগই ছিল বঙ্গের অর্থনৈতিক আধিপত্যের শেষের শুরু।
দিল্লী কখনো চায়নি অখণ্ড বাংলা। দিল্লি চেষ্টাও করেনি বাংলাকে এক রাখার। বাংলা ভাগ না হলে উত্তর ভারতীয় আধিপত্য কায়েম হতো না। আজ আবার সেই নকশা, সেই এক খেলা। ভোটের আগে ওরা সোনার বাংলার কথা বলে, আর ভোটের পর ওদের সাংসদরা বাংলা ভাগের দাবী তোলে। উত্তর ভারতীয় হিন্দী-হিন্দু-হিন্দুস্তানী শক্তির দক্ষিণ এশিয়া আধিপত্য কায়েম করার সামনে প্রাচীর হয় দাঁড়িয়েছে আজ বাংলা। ঠিক যেমন বাংলার ভুজিজ সম্পদকে বাংলার থেকে কেঁড়ে নিতে ৪৭ এ ভাগ হয়েছিল আজও সেই একই রকম ভাগের চক্রান্ত চলছে। লক্ষ্য একটাই বাংলার সম্পদের দখল, বাংলার অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডে আঘাত, বাংলার রাজনৈতিক অধিকারে হ্রাস টানা।