গ্রাম বাংলার কেচ্ছা-রূপকথা-লোককথা

লেখক / সংগ্রাহক – মুহাম্মদ আয়ুব হোসেন
প্রথম খণ্ড
দ্য ক্যাফে টেবল
পাঠ প্রতিক্রিয়া – নুরজামান শাহ
একটা সময় ছিল যখন আমরা সন্ধ্যাবেলায় দাদি বা ঠাকুমার কাছে বিভিন্ন রূপকথা,লোককথা শুনতে শুনতে কল্পলোকে হারিয়ে যেতাম। চোখ বন্ধ করলে সেসব গল্পকাহিনির ছবি চোখের কোণে ভেসে উঠত।গ্রামীণ জনজীবনে ছড়িয়ে থাকা এইসব রূপকথা, লোককথা বা কেচ্ছাগুলোর কোনো লিখিত রূপ ছিল না, নির্দিষ্ট সময়সীমা ছিল না। গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের স্মৃতির কোটরে যুগ যুগ ধরে জমা থাকত।লোকসংস্কৃতির এইসব গল্পগুলি বহুদিন ধরে সংগ্রহ করে একত্রিত করেছেন গবেষক মুহাম্মদ আয়ুব হোসেন।
দ্য ক্যাফে টেবল প্রকাশনা সেইসব কাহিনিগুলো দু’মলাটের মধ্যে এনে প্রথম খণ্ড প্রকাশিত করেছে ২০১৯ সালের কলকাতা বইমেলায়।নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় কাজ। অনেক আন্তরিকতা ও সযত্নে এই বইটি উন্মোচন করেছেন।এই বইয়ে প্রকাশিত লোকগল্পগুলির মধ্যে রূপসি ও ফুলকুমারী,শম্ভু জেলে ও তিন রাজকন্যে, জুঁই – চামেলির কথা, ছ- মাসের বর, বারো বছরের কন্যা, মহিমরাজা, হরিণবতী প্রভৃতি গল্পগুলির মধ্যে মিশে আছে গ্রাম বাংলার মেঠো গন্ধ।কেচ্ছাকাহিনিগুলোতে খুঁজে পাওয়া যায় ছেলেবেলার ঠাকুমার কাছে শোনা অনুপম স্মৃতি।খাঁটি সাহিত্যের আনন্দ যেন রাঢ় বাংলার প্রচলিত এই উপকাহিনির মধ্যেই নিহিত আছে। প্রতিটি গল্পতেই শ্রুতিমধুর পাঁচালি গান, কবিতা এবং আঞ্চলিক উপভাষার তর্জমাও প্রকাশিত হয়েছে।আবার এই কাহিনিগুলোতে লক্ষ্য করা যায় সম্প্রীতির বার্তা। ধর্মীয় বিশ্বাসের উর্দ্ধে এই গল্পগুলি নির্বিশেষে মা-ঠাকুমার মুখে মুখে চলে আসছে।
গবেষক মুহাম্মদ আয়ুব হোসেন দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার, রেভারেন্ড লালবিহারী দে’র উত্তসূরী হিসেবে যথেষ্ট প্রশংসার দাবি রাখে।এই লোককাহিনিগুলো সংগ্রহ করা, সংরক্ষণ করা সার্থক লেখক সত্ত্বার পরিচয় দিয়েছেন।শিল্পী দীপাঞ্জন বোসের প্রচ্ছদ ও অলংকরণেও গ্রাম বাংলার অপরুপ চিত্রকল্প এঁকেছেন।এই বইটির পরবর্তী খণ্ডের অপেক্ষায় রইলাম।