‘বিদূর ভেমুলা’ নাটক মঞ্চে

ছোটন দত্ত গুপ্ত
‘বিদূর ভেমুলা’ নাটক দেখে রিভিউ লিখবো, দেখার আগেই ভেবেছিলাম। আসানসোলের কল্যাণ দা, ফোনে বললো, এ নাটক নিয়ে তুমি লেখো, অনেক মানুষের জানা দরকার। তাই রোহিত ভেমুলা যখন বিষয় তখন তো মানুষের মনে এ ঘটনা বারবার নক করিয়ে দেওয়ার দরকার। প্রতিনিয়ত এতো বর্বরোচিত ঘটনা ঘটছে তা এই যন্ত্রণাময় সময়ে মনে রাখা দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই নাট্যকার অনুপ চক্রবর্তী’র লেখা, সুদীপ চ্যাটার্জি পরিচালিত ‘বিদূর ভেমুলা’ নাটক দেখে সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করলাম।
‘বিদূর ভেমুলা’ নাটক মহাভারতের বিদূর ও আজকের ‘রোহিত ভেমুলা’ কে চিত্রিত করছে। -এক ক্লিকে দুনিয়া হাতের মুঠোয় বলে যতোই আমরা বুকফুলিয়ে টেবিল বাজাই জাতিবিদ্বেষে আমরা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি এবং ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছি।
মহাভারতে ব্যাসদেবের ঔরসে এবং বিচিত্রবীর্যের প্রথমা স্ত্রী শূদ্রা দাসীর গর্ভে বিদূর জন্মগ্রহণ করেন। বিদূর অত্যন্ত ধর্মশীল, ধীমান, সূক্ষদর্শী ছিলেন। বিদূর শূদ্রা জননীর গর্ভে জন্মেছিলেন। রাজ্যে তার কোন অধিকার ছিল না। কিন্তু পোশাকি পোস্ট ছিল, ধৃতরাষ্ট্রের মহামন্ত্রী অথচ তার পিতা উচ্চবংশীয় ছিলেন। কিন্তু পিতা কোনো দায় নেননি। সেদিনকার মতো আজকেও সংবিধানে মানুষের সমান অধিকার থাকলে রোহিত ভেমুলা কে সুইসাইড করতে হয় যা রাষ্ট্রের দ্বারা খুন বলা উচিত।
কেন বিদূর ও রোহিত ভেমুলাদের খুন হতে হয় সেটাই ‘বিদূর ভেমুলা’ নাটকে ধাপে ধাপে সুদীপ দেখিয়েছেন। ধৃতরাষ্ট্রের অধর্মে, বিদূর বাধা হয়ে দাঁড়ালে কিভাবে বিদূর কে শূদ্র বলে ধৃতরাষ্ট্রের ছেলেদের কাছে অপমানিত হতে হয়েছে। আবার নাটকের পরের সিকোয়েন্সে ছাত্র রোহিত ভেমুলা কে কিভাবে একটা বিশ্ববিদ্যালয় পরোক্ষে এই দেশ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাকে স্কলারশিপের টাকা বন্ধ করে, হোস্টেল থেকে তাড়িয়ে দিয়ে এই দেশ মৃত্যুর জাল বুনে দিচ্ছে। পরিচালক সুদীপ তার এই নাটকে তুলে ধরেছেন। বিদূর ও রোহিত ভেমুলার চরিত্রে পরিচালক সুদীপ অভিনয় করেছেন। এতো তাড়াতাড়ি ড্রেস চেঞ্জ করে দুটো চরিত্র করা খুবই কঠিন। এ নাটকে বেশীরভাগ অভিনেতারাই দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তবে মিউজিক নিয়ে ভাবা উচিৎ। কিছু কিছু জায়গায় অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত মিউজিক আছে বলে আমার মনে হয়। সেটা নিয়ে ভাবা দরকার। আরেকটু টাইট হলে ভালো।
নাট্যকার অনুপ চক্রবর্তী যে এই বিষয় নাটক লিখেছেন এরজন্যই তাকে অভিনন্দন। আর পরিচালক তো এই নাটক মঞ্চস্থ করে ফ্যাসিবাদের মুখে ঝামা ঘসে দিয়েছেন।
আমি যদিও মহাভারতের বিদূর(বিতর্কিত চরিত্র) থেকে রোহিত ভেমুলা কে হাজার আলোক বর্ষ এগিয়ে রাখব। ওই বয়েসে সে রাষ্ট্রকে যেভাবে ধাক্কা দিয়ে গেলো!
এই অদ্ভুত কঠিন সময় এ নাটক দেখা উচিৎ এবং অন্যকে দেখানো উচিৎ।
ছোটন দত্ত গুপ্ত : বিশিষ্ট নাট্যকর্মী।