নতুন আলোয় “গান্ধারী”

সৌভিক চট্টোপাধ্যায়
গত ১০ই জুন, শুক্রবার, সন্ধে বেলায় উত্তর কলকাতার মিনার্ভা থিয়েটারে মঞ্চস্থ হল বেলঘরিয়া রূপতাপস নাট্যদলের নবতম প্রযোজনা “গান্ধারীর অভিশাপ”। নাট্যকার শঙ্কর বসু ঠাকুর, নির্দেশক কৌশিক ঘোষ। “মহাভারত” এ গান্ধারী চরিত্রটি বহুস্তরীয়। কখনও সে আলোর ঝর্ণাধারায় মেতে ওঠা সুবলকন্যা অষ্টাদশী, কখনো সে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তপস্বিনী, হস্তিনাপুর সম্রাজ্ঞী আবার কখনো শতপুত্রহারা শোকবিহ্বল মা। এই নাটকে, এই ত্রিস্তরীয় চরিত্রটিকে তিনটি আলাদা চরিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন নির্দেশক, যা এককথায় অনবদ্য – অভিনয়ে তনুশ্রী সাহা, শিপ্রা মুখার্জি ও মালবিকা চক্রবর্তী খুব সুন্দরভাবে চক্ষুদান করেছেন এই তিনটি স্তরকে। এই তিনটি আস্তরণ সময়ে সময়ে একাত্ম হয়েছে যেটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

“মহাভারতে” বর্ণিত বহুঘটনার বিশ্লেষণও বহুমাত্রিক। একই ভাবে, চোখে কাপড় বেঁধে রাখার প্রতিজ্ঞার কারণ বিভিন্নভাবে বিশ্লেষিত হতেই পারে। কেউ তাকে পতিপ্রেম বা পত্নীব্রত হিসেবে দেখবেন, কেউ দেখবেন মৌনমুখর প্রতিবাদ হিসেবে। কিছু এমন লেখাও পাওয়া যায় যেখানে ঘটনার বিভিন্নতা রয়েছে। সাধারণত আমরা জানি , ধৃতরাষ্ট্র জ্যোতিষাচার্য মহর্ষি জৈমিনির স্মরণাপন্ন হয়েছিলেন যুদ্ধের আগে, যেখান থেকে তিনি কৌরব পক্ষের সম্ভাব্য পরাজয় সমন্ধে জানতে পেরেছিলেন আবার কিছু লেখা হয়ত এমনও রয়েছে যেখানে দুর্যোধন সহদেব এর কাছে জানতে চেয়েছিলেন যুদ্ধের ফলাফল যুদ্ধের আগে – এই নাটকে দ্বিতীয়টি প্রদর্শিত হয়েছে। তাই নাটকের কনটেন্ট নিয়ে যদি আলোচনা করতে হয় লেখাটা অনেকটাই বড় হয়ে যাবে এবং সেটি বিতর্কেরও সৃষ্টি করতে পারে। সেইদিকে না গিয়ে অভিনয়ের বিষয়টিতে ফেরা যাক।

আবহ খুব সুন্দর হয়েছে। আলো প্রক্ষেপন আরো ভাল হতে পারতো। চরিত্রগুলি আলো আঁধারীর মধ্যে দিয়ে তৈরী হলেও, মুখ অভিব্যক্তি একটু অস্পষ্ট। কোরাস চরিত্র এই নাটকটির ভাবনা রূপায়নে অন্যতম সহায়ক ।মঞ্চসজ্জা বুদ্ধিদীপ্ত।

মোটের উপর, একঘন্টা-সোয়া একঘন্টায় খুব ভাল বেঁধেছেন পরিচালক নাটকটিকে। অন্যান্য চরিত্রে সহদেব আছেন বিদুর আছেন।শ্রীকৃষ্ণের চরিত্রে অভিনয় করেছেন পরিচালক কৌশিক ঘোষ নিজে। আমরা এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে আছি যেখানে কোনো পুরাণ কিংবা মহাকাব্যের চরিত্র নিয়ে পরীক্ষামূলক কাজ করা সত্যি সাহসের – এখানে রূপতাপসকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। এটি এই নাটকের দ্বিতীয় অভিনয় । সময়ের সাথে আরো বলিষ্ঠ হবে এই নাটক এই আশা রাখি।
সৌভিক চট্টোপাধ্যায় : চিত্র পরিচালক।
