জি এন সাইবাবা সহ বাকিদের মুক্তির সিদ্ধান্ত স্থগিতের বিরুদ্ধে হিমাংশু কুমারের খোলা চিঠি

(দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ও সমাজকর্মী জি এন সাইবাবাকে বেকসুর খালাস করার বম্বে হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে সুপ্রিম কোর্ট স্থগিত করার পরে সমাজকর্মী হিমাংশু কুমার বিচারকদের উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন, যেখানে তিনি সাম্প্রতিক সময়ে বিচার ব্যবস্থায় তাঁদের ভূমিকা সম্পর্কে কথা বলেছেন।বেশ কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে,প্রকাশ্য অবিচার করার জন্য বিচার ব্যবস্থাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।এমনকি বলেছেন যে, তিনি এই চিঠির জন্য আদালত অবমাননার দায়ে দোষী এবং তাকে জেলের সাজা দেওয়া হোক।হিমাংশু কুমারের সম্পূর্ণ চিঠি-সম্পাদক)
জজ সাহেব,
আমি আপনাকে এই খোলা চিঠি লিখছি কারণ আমি চাই দেশের মানুষও এই চিঠি পড়ুক।
আমার বাবা-মা এবং জেঠামশাই এই দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন, তাদের প্রজন্মের লাখো মানুষ যেমন লড়াই করেছিলেন।তাদের সকলের স্বপ্ন ছিল এমন একটি ভারত গড়ার যেখানে কারো প্রতি অন্যায় হবে না, সবার প্রতি ন্যায়বিচার হবে।আমাদের এই প্রজন্ম, পূর্বপুরুষদের ন্যায়পরায়ণ ভারত নিয়ে দেখা স্বপ্ন পথভ্রষ্ট হয়ে হারিয়ে যেতে দেখছে।
এদেশের সরকার কোনো পূর্ব আইনি পদক্ষেপ ছাড়াই মুসলমানদের বাড়িঘর বুলডোজ করে, কিন্তু কোনো আদালত এটা তার অপমান হিসেবে অনুভব করে না যে, আদালতের সিদ্ধান্ত ছাড়া সরকার কাউকে শাস্তি দিতে পারে না।সরকার যদি এটা করে তাহলে তা আদালত অবমাননা। কিন্তু জজ সাহেবরা কিছু মনে করে না।
এদেশে জজ লয়াকে গুন্ডা বিজেপি নেতা, মন্ত্রী খুন করে, কিন্তু কোন বিচারক রাগ করে না এবং ভাবে না যে একজন বিচারককে খুন করার পর সেই গুন্ডা জেলে না গিয়ে কীভাবে পালালো? কিন্তু একজন বিচারক সেই গুন্ডা মন্ত্রীর সাথে বিচারক হত্যার প্রমান নষ্ট করে পরে পুরস্কার হিসেবে উচ্চ আদালতে বিচারক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।
উপজাতীয় এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী নিয়মিত উপজাতীয় নারীদের ধর্ষণ করছে, কিন্তু আদালত নির্লজ্জভাবে সেই নারীদের অভিযোগ গ্রহণ করে ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছে।আপনার সমর্থনে ধর্ষকরা তাদের গোঁফে তা দিয়ে নতুন নারীদের ধর্ষণ করছে।আমি উপজাতীয় শিশু, নারী ও বৃদ্ধ হত্যার ৫১৯টি মামলা আদালতে দিয়েছি কিন্তু আফসোস, আপনারা কোনো মামলায় বিচার করেননি।
ভীমা কোরেগাঁও মামলায় সাড়ে চার বছর পেরিয়ে গেলেও সরকার চার্জশিট দাখিল করতে পারেনি।আর করবেই বা কি করে, গোটা মামলাই সম্পূর্ণ ভুয়া।কিন্তু আপনি এই প্রবীণ সমাজকর্মীদের জামিন দিচ্ছেন না।
জিএন সাই বাবা এবং তার অন্যান্য সহযোগীদের জড়িত মামলার রায়ে বিচারক লিখেছিলেন যে তাদের অপরাধ এই যে এই লোকদের কারণে ভারতের উন্নয়ন থেমে যায়, তাই আমি তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিচ্ছি।আর উন্নয়নের অর্থ, আমরা সবাই জানি উপজাতীয়দের জল,জঙ্গল পুঁজিপতি দের হাতে তুলে দেওয়াই আপনার চোখে উন্নয়ন।
থানার ভিতরে সোনি সোরির গোপনাঙ্গে পাথর ভরা হয়েছিল।মেডিকেল কলেজ তার শরীর থেকে বের করা পাথরগুলো আপনার টেবিলে রাখা হয়েছিল, কিন্তু এগারো বছর পর আপনি ন্যায়বিচারে হোঁচট খেয়ে তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
আপনি বিলকিস বানর ধর্ষক এবং তার মেয়ের খুনিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য গুজরাট সরকারের অমানবিক সিদ্ধান্তকে ন্যায্যতা দিয়েছেন।দুঃখিত আপনি আদালতকে ন্যায়বিচার নয় অন্যায়ের জায়গায় পরিণত করেছেন।
লক্ষ লক্ষ মানুষ এই বিশ্বাসে জাতি হিসাবে একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত নেয় যে তাদের প্রতি কোন অবিচার করা হবে না।কিন্তু আপনি তাদের সমর্থন করছেন যারা প্রতিদিন অন্যায় করে এবং যারা বিচার চায় তাদেরই অপরাধী ঘোষণা করা হয়।
জজ সাহেব, আপনি আদালতের অবমাননা করছেন।দুঃখিত, আপনি খুব দুর্বল এবং ভীত।সরকারকে ভয় পাওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিলোনা, কারণ সংবিধান আপনাকে সরকার থেকে ভয় মুক্ত রেখেছে।
তোমাকে দেখলে সেই কুকুরটার কথা মনে পড়ে যার সামনে কেউ লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর কুকুরটা ভয় পেয়ে পেছনের পায়ের মাঝে লেজ চেপে ধরেছে।আমরা আপনাকে আবার কুকুর থেকে মানুষ করতে চাই।আপনি শুধু ন্যায়বিচারকে হত্যা করছেন না, আপনি মানবতা, গণতন্ত্রের আইন, সংবিধান সবাইকে হত্যার জন্য দায়ী।
এবং পরিশেষে আমি বলতে চাই যে আমি এই চিঠিটি আপনাকে অবমাননা করার জন্য লিখেছি কারণ যারা জনসাধারণের প্রতি অবিচার করে তাদের আমি সম্মান করতে পারি না।দয়া করে আমাকে আপনার অবমাননার জন্য কারাগারে বন্দী করার আদেশ দিন যেখানে আপনার সহায়তায় ফাদার স্ট্যান স্বামী এবং পান্ডু নরোটেকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল সেভাবে আমাকে হত্যা করা যেতে পারে।
আমি চাই শিশুরা অন্তত আমাকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে স্মরণ করুক যিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং মানুষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং নিহত হয়েছেন।
ভারতের একজন ন্যায়পরায়ণ নাগরিক
হিমাংশু কুমার