শুভাশীষ দত্তের কবিতা

শুভাশীষ দত্তের কবিতা
১.
এই হত্যাকূপে
এই হত্যাকূপে আর কত বলি ?
সভ্যতার নিম্নে আমার ঘর
তারও নিম্নে জল
বাঁধা ডিঙিনৌকার
গলুইতে ঠেকে এসে জীবনের
পদ্মপানাগুলি।
মধ্যরাতে রোজ সেখানে
কার একটা লাশ।
কী তোমার নাম ধাম
কী পরিচয় ? বয়স ধর্ম জাতি ?
কে তোমার আশ্চর্য সন্তান ?
প্রতিদিন নতুন সূর্য
প্রতিদিন যুবসূর্যের লাশ…
তার রক্ত পান করে ওই কাপালিক আকাশ
কে তাকে মর্গে চালান করে !
তার অন্ধকার চেতনায়
ফোটে নক্ষত্র সভ্যতার
অধিকার নেই তার নক্ষত্রসভায়।
২.
লাইটহাউস
ঝড়ে বিধ্বস্ত লাইটহাউস
কাত হয়ে ডুবে আছে সমুদ্রে ;
তার গায়ে ঢেউ – ছেলেখেলা ;
পাথর উল্টে প’ড়ে থাকা
অনিশ্চিত সময়কাল –
শ্যাওলা জমছে স্তরে স্তরে।
লাইটহাউসের আলোর কোটর
কাকে কী সংকেত দেবে আর !
দূর সমুদ্রে শুনতে পাই
কারা সব দিক ভুল করে।
৩.
অতিথি
এমনই সব হাসি ছড়িয়ে থাকে জলে
এমনই সব কান্না গলে
আকাশ থেকে ভরা আষাঢ় মাসে।
এমনই সব দুঃখ যন্ত্রণা সুখ
এমনই সব ভাঙা বুক স্মৃতিনদীর পাশে
পরিত্যক্ত বাড়ি।
আমরা নদীর পাড়ে আসি
কুড়িয়ে রাখি সব –
আমাদের কান্না হাসি পান্না হীরার উৎসব
বর্ষা বসন্ত থেকে শীতে
পৃথিবীতে একা একা
নষ্ট বালকের মতো আসে।
ভাঙা বুক পরিত্যক্ত বাড়ি ভালোবাসে।
৪.
টিয়া
কে আছে ? জেগে কে আছে ?
কে আছে শুয়ে অন্ধকার আকাশে
কে আছে ? জেগে কে আছে ?
শুনেছি কার কাছে একটি টিয়া
খাঁচার আনাচে কানাচে
ঘুরে বেড়ায় ; তাকে ছোলাজল দিলে
কোনোমতে বাঁচে।
শুনেছি সে টিয়ার প্রেমিক
কোথায় কোন একলা আকাশে
শুয়ে শুয়ে মেঘে মেঘে ভাসে !
সে আছে ? জেগে সে আছে ?
আর টিয়া কার কাছে খাঁচায়
শুয়ে আছে ? ছটফট করে বুঝি ?
শলাকা কামড়ায় ?
টিয়ার মালিক ভাবে আহা কী নাচে !
দূর আকাশের কালো
ওর চোখে, কবে বিদ্যুতের আলো
ঝলসে ওঠে ; দ্যাখে আকাশে আকাশে
প্রেমিকের দেহ প’ড়ে আছে।
৫.
ফড়িং
পাখা ফড়ফড়ানির দিন।
ডানা গুটিয়ে চুপ
ব’সে আছে ফড়িং।
পাখি পাখপাখালির শব্দে
হতচকিত আকাশ
বিশ্বে ঝরছে মনোস্কাম।
মনোস্কামের বৃষ্টিতে
ভিজছে ফড়িং চুপ –
তার অন্তহীন বিশ্রাম।
লেখকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়াশুনা। ছোট থেকে হাতেখড়ি কবিতায়। ঘুরে বেড়ানোর পোকা। হিমালয় ক্ষ্যাপা মানুষ। আদ্যোপান্ত রাজনৈতিক, কিন্তু দলাদলি কূটকচালি থেকে দূরে। এমনিতে নির্জনতা প্রিয়, কিন্তু দুর্গাপুজোর ভিড়ের আলাদা আকর্ষণ। প্রথম কবিতার বই : বইটির নাম নেই (২০১৯)