সীমিতা মুখোপাধ্যায়ের তিনটি কবিতা

সাদা পাতা
একটা ব্যর্থ-সকাল তাকিয়ে আছে
জলভরা আকাশের দিকে,
ছাতিমের বেতার-তরঙ্গ বয়ে আনছে
মেঘলাবেলার ঘ্রাণ, শিউলিঘর সেজে উঠছে
এক ছাপোষা-উচ্ছলতায়—
সেই সাদামাটা গেরস্থালী থেকে
ম্লান আলোর মতো চুঁইয়ে পড়ছি আমি,
নিচে জেগে আছে প্লাস্টিক-বাঁধানো পৃথিবী।
আশ্বিনের অযাচিত কুহু-র মতো
তুমি ফিরে আসবে এ-পাড়ায়—
এসব অবান্তরেও কলম আর নড়ছে না
দুটোমাত্র আঁচড় কাটার পর …
তে’তলার বারান্দাটা শুধু ঝুঁকে পড়ে দেখছে—
রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে
ভিজে-সপসপে তরুণ-তরুণী।
কনফেশন
দুই বৃন্তে বুমের্যাং,
অপরাজিতা ফুলের মধ্যিখানে দীপ।
বাহাত্তর ঘন্টার কালো নখ, নিয়তি, ওষুধ একটাই।
এত কেঁদেছে পৃথিবী, বন্যায় ভেসে যায় মানুষের ঘর—
এসব চিত্র দেখে মনে পড়ে, প্রভু,
আমারও তো তিনভাগ জল!
কখনো ভূত আসে, বত্রিশটা জিহ্বা নিয়ে
ভিনগ্রহী চাটে মুখ, শকুনে ছিঁড়ে দেয় নাড়িভুড়ি।
প্রেমিককে ঠেলে দিয়ে রেললাইনে, আমি
জন্মদিন কাটতে বসি ধারালো ছুরিতে।
তবে তুমি পিতা, বড়োই দুষ্ট, মেয়ের মাংস খেতে না পেয়ে
জন্মনিরোধক গিলিয়ে দিচ্ছ দুহাত ভরে।
হিমবাহগলনের গান
জলঝাঁঝিতে ফাঁস লেগে মরে গেল যে মৎস্যকন্যা—
তার খবর সংবাদপত্রে আসে না।
তাই ভোর হতে না হতেই দেহাতিকণ্ঠে
কে যেন গাইছে হিমবাহগলনের গান, সক্কাল সক্কাল
বিরাগ এসে বসেছে তোমার জানালায়।
প্রাতঃভ্রমণ তোমায় বিছানা ছাড়তে বাধ্য করলে
ভারি অস্বস্তিতে পড়, বিস্বাদ চায়ের কাপ থেকে
তুমি নেমে আস সিঁড়ি বেয়ে—
পাশের পানাপুকুরে তখন কার একটা কুকীর্তি
ভেসে উঠেছে।
সীমিতা মুখোপাধ্যায় : কবি ও গল্পকার।
2 Comments
Tinte kobitai asadharan.
ভালোবাসা।