• May 30, 2023

দেখো ভাই শচীন এলো

 দেখো ভাই শচীন এলো

সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় :- সেটা ১৯৮৭ সাল । ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালীন শ্রেষ্ঠ নক্ষত্র বিদায় নিলেন খেলা থেকে ,সুনীল গাভাসকার । অনেকেই ভাবছিল এরকম খেলোয়াড়-এর বিকল্প হবেনা। বাস্তবিক-ই ৭৪ জন ফাস্ট বোলার সামলানো খেলোয়াড় –এর বিকল্প হয় না । কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটের পীঠস্থান বোম্বাই কিছু অন্য রকম-ই ভাবছিল । তার চিহ্ন ৮৭-৮৮ সালেই হ্যারীস শীল্ড ও গাইজ লিগ-এ পাওয়া যায় । কিন্তু আসল ঘটনা ঘটা শুরু করল ৮৮-৮৯ এর রঞ্জি ট্রফি থেকে।

১০ই ডিসেম্বর ১৯৮৮ সালে বোম্বেতে শুরু হল গুজরাট বনাম বোম্বের রঞ্জি ম্যাচ। বোম্বের ঘোষিত দলনায়ক দিলীপ ভেঙ্কসরকার সেইদিন বিশাখাপত্তনাম-এ নিউজিল্যান্ড-এর সাথে ভারতের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন । ফলে বোম্বের আধিনায়ক ছিলেন লালচাঁদ রাজপুত । গুজরাতের অধিনায়ক ধানুষ্ক প্যাটেল টসে জিতে ব্যাটিং নিলেন। প্রদীপ খালসিওয়াল(৪/২৮)ও অনুপ সাবনিস (৫/৪১)এর ধাক্কায় ৫০.১ ওভারে ১৪০ রানে শেষ। লালিওয়ালা(৪২) ছাড়া গুজরাটের কাউকে দেখে মনে হয়নি এরা ব্যাট করতে পারে।
বোম্বের হয়ে ইনিংস-এর সূচনা করতে নামলেন রাজপুত ও শিশির। দলীয় ৪৭ রানের মাথায় ধানুষ্ক প্যাটেল-এর বলে শিশির ৩৫ করে ফিরলেন। প্রথম দিনের শেষে বোম্বে ৯৫/১। তখনও সারা ভারত জানেনা কাল কি হতে চলেছে।
ওদিকে বিশাখাপত্তনামে ভারত নিউজিল্যান্ডকে ১৯৬ রানে শেষ করে দিয়েছে। জোন্স ৬৩ ও রাদার ফোর্ডের ৭৫ না থাকলে রান আরো কম হতো। শ্রীকান্ত বল হাতে ৫ উইকেট নেন ২৭ রানে। জবাবে ভারত ৪৬.২ওভারে ৬উইকেট-এ ১৯৭ রান করে জিতে যায়। শ্রীকান্ত ৭০ করেন। আজহার ৪৮ করেন। ভেঙ্কসরকার শূন্য করে আউট হয়।
গুজরাট বনাম বোম্বের রঞ্জি-র দ্বিতীয় দিন ১১ই ডিসেম্বর অ্যালান সিপ্পির সাথে আরও ১১১ রান যোগ করে ২০৬ রানের মাথায় দুর্ভাগ্যজনক ভাবে রান আউট হন রাজপুত। ব্যক্তিগত ৯৯ রানের মাথায়। এর পর ঘটে আগামি আড়াই দশক ব্যাপী আধিপত্যের প্রথম সূচনা। ব্যাট হাতে নামেন দশম শ্রেণীর স্কুল ছাত্র ১৫ বছর ৭ মাস ১৭ দিন বয়সী সারদাশ্রম বিদ্যাপীঠ এর ছাত্র, মারাঠি ভাষার অধ্যাপক পিতা ও ব্যাঙ্ক কর্মী মাতার পুত্র বিস্ময়-বালক শচীন তেন্ডুলকার । এর পর অ্যালান সিপ্পির সাথে মিলে শচীন তেন্ডুলকার যোগ করেন ১৫৫ রান । সিপ্পি ৫ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট ব্যাট করে ১৪টা ৪ ও ১টা ৬এর সাহায্যে করেন ১২৭। তিনি যখন আউট হন দলের তখন ৩৬১। এর পরও রাজপুত ইনিংস ডিক্লেয়ার্ড করছিলেন না শুধু শচীন-এর শতরানের জন্য। শচীন-এর ছিল ৯২(১২৭বলে)। ততক্ষণে ১২টা ৪ হয়ে গেছে। সিপ্পিকে আউট করা জিন্টো তখন বল করছেন। তার বোলিং ফিগার ১৬.৩ ওভার বল করে ৩৮ রান দিযে ২টি উইকেট নেন। জীবনের প্রথম প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলতে নামা শচীন পরপর দুটি বলে স্টেপ আউট করে ৪ মারে। ফলে বোম্বে ১০৫.৫ ওভারএ ৩৯৮/৬। শচীন ১২৯ বলে ১০০ করে অপরাজিত থাকেন । রঞ্জির ৬৩ তম খেলোয়াড় । বোম্বের ৬ষ্ঠ খেলোয়াড় যিনি রঞ্জির অভিষেক ম্যাচে শতরান করেন। ৩৮ বছর আগে মাধব রাও আপ্তে সৌরাষ্ট্রর বিরুদ্ধে ১০৮ রান করেছিলেন। তারপর এই।

‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট’ লিখলো “সবথেকে আশাপ্রদ ব্যাপার হলো নতুন খেলোয়াড় ১৫ বছরের শচীন তেন্ডুলকার । প্রথমে লিগে ৩৪৯, ৮৭.২৫ গড়ে এবং অবশেষে ৫০০ রান এক মরশুমে। বোম্বের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ এই খেলোয়াড় কঠিন সময়েও স্বাভাবিক খেলা খেলেছে এমনকি ঘূর্ণি পিচেও। স্পিন-পেস দুটোতেই সে সমান স্বচ্ছন্দ সে। তিনি অবশ্যই বেঙ্গসরকার, মঞ্জরেকার,রাজপূত ও হাত্তাংগারির মতো খেলোয়াড় হবেন” (ব্লসমিং অফ দ্য ইয়ুথ – পৃ-১২৯ , প্রদীপ বিজয়কার , ইন্ডিয়ান ক্রিকেট , ৪৩ তম এডিশন ) ।
লেখক বোঝেননি, এ সবে শুরু ছিল। এর পর ঐ ১৯৮৯ সালে ইরানি ট্রফিতে দিল্লির বিরুদ্ধে ৩৯ ও ১০৩ হবে। আর তার পরই ১৬ বছর ২০৫ দিন বয়সে অর্থাৎ প্রথম শ্রেণী ক্রিকেটে অভিষেকের ঠিক ৩৫৩ দিন পর টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটবে। লেখক কি জানতেন ?
জয় জিন্টো! সে কি জানতো তার হাত ধরেই শুরু হতে চলেছে আর এক মুম্বইকর গাভাস্কারের ৮১ খানা সেঞ্চুরি ছোয়ার শুভ সূচনা ?

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Related post