সরোজ দত্ত হত্যার পঞ্চাশ বছর

অশোক চট্টোপাধ্যায়
আজ ৫ অগাস্ট ২০২১, কংগ্রেসি জমানায় পুলিশ কর্ত্তৃক কলকাতা ময়দানে কবি-সাংবাদিক-রাজনীতিক নেতা সরোজ দত্ত-হত্যার পঞ্চাশ বছর পূর্তি। তাঁর মতো একজন সাহসী ‘বীর’-এর চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস সমসময়ের পুলিশ-প্রশাসন অর্জন করতে পারেনি। তাই তাঁকে কাপুরুষের মতো হত্যা করে তাঁর মুণ্ডুচ্ছেদ করেছিল যাতে তাঁর দেহ শনাক্ত করা না যায়।
সরোজ দত্তের একসময়ের সহযোদ্ধা অনিলকুমার কাঞ্জিলাল উত্তরকালে বলেছিলেন : নিজের বিশ্বাসের বেদিমূলে যে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করতে পারে, সে বীর; তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে অনেক কবি ছিলেন, শিল্পী ছিলেন, কর্মী ও পণ্ডিত ছিলেন—কিন্তু বীর ছিলেন একজন, তিনি সরোজ দত্ত।
বাস্তবিক সরোজ দত্ত তাঁর বীরত্ব সপ্রমাণ করেছিলেন। নিজের বিশ্বাসে অটল থেকে প্রতিক্রিয়াশীল এবং শত্রুবর্গের যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে অসম সাহসে লড়াই করেছিলেন নিরবচ্ছিন্নভাবে। এই লড়াইয়ে আপসের কোনও স্থান ছিলনা। ভয় শব্দটি তাঁর অপরিচিত ছিল। তাই বধ্যভূমিতে দাঁড়িয়েও তিনি ভয় পান নি। একটু আপস করলে ইতিহাসটা হয়তো অন্যরকম হতে পারতো—কিন্তু কোনরকম আপসের চিন্তাকে তিনি কখনও বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দেন নি। ফরাসি বিপ্লবের প্রখ্যাত নেতা দাঁতঁ (Danton), যাঁর বৈপ্লবিক প্রতিভাকে স্বয়ং মার্কস এবং লেনিন প্রশংসা করেছিলেন—তিনিও শেষপর্যন্ত শত্রুর নিকটে নিজেকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। সরোজ দত্ত দাঁতঁ-র সঙ্গে নিজের পার্থক্যকে বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর ছিলেন।
সন্দেহ নেই, সরোজ দত্তের মধ্যে অধিবিদ্যা সক্রিয় ছিল, শত্রু-মিত্র নির্ণয়ে তিনি খুব একটা স্থিতধীর পরিচয় রাখতে পারেন নি, মতান্ধতা তাঁর চিন্তাচর্চার সৃজনশীল বিকাশকে অনেক সময়ই রুদ্ধ করেছিল। তথাপি মতাদর্শের যে অবস্থানে একবার তিনি দাঁড়িয়েছেন, সেখান থেকে কোনও ঝড়ঝঞ্ছাই তাঁকে টলাতে পারেনি। চল্লিশের দশকে তাঁর গৃহীত রাজনৈতিক অবস্থানে তিনি যেমন অটল ছিলেন, উত্তর-পঞ্চাশ বা ষাটের দশকের পরবর্তী সময়েও তাঁর গৃহীত রাজনৈতিক অবস্থানে তিনি অচল আনুগত্য রেখে অসি-মসীকে এক এবং অবিচ্ছেদ্য ছন্দে মিলিয়েছিলেন। এখানেই সরোজ দত্তের অনন্যতা, অসাধারণত্ব। তাঁর লেখনীতে যুক্তির আয়ুধকে তিনি যেভাবে সাজাতেন তাতে শত্রুপক্ষ সহজেই ধরাশায়ী হতো। তাঁর কলমের অগ্নিবর্ষী লেখাকে ভয় পেতনা শত্রুপক্ষের এমন লোক খুবই কমই ছিলেন। পুলিশও তাঁকে ধরার পর বেশিক্ষণ তাঁকে বাঁচিয়ে রাখার সাহস দেখাতে ব্যর্থ হয়েছিল।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৪ অগাস্ট রাতে কলকাতার ৯ নম্বর রাজা বসন্ত রায় রোডে অধ্যাপক দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে পুলিশ অফিসার রাম চক্রবর্তী সরোজ দত্তকে গ্রেপ্তার করেছিল। এই ঘটনার সাক্ষি ছিলেন স্বয়ং অধ্যাপক দেবীপ্রসাদ এবং তাঁর স্ত্রী মঞ্জুষা চট্টোপাধ্যায়। এরপর রাতশেষ প্রত্যূষে তাঁকে ময়দানে নিয়ে গিয়ে পুলিশ ভ্যান থেকে নামিয়ে তাঁকে চলে যেতে বলে তাঁকে পেছন থেকে কাপুরুষের মতো গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। সামনা সামনি চোখে চোখে রেখে গুলি করার সাহস পর্যন্ত দেখাতে পারেনি সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের পুলিশ। বাংলা সিনেমাজগতের জনৈক প্রখ্যাত অভিনেতা প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে এই ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছিলেন। এবং পরে টালিগঞ্জের সিনে টেকনিসিয়ান অ্যাসোসিয়েশানের অফিসে সরোজ দত্তের এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের কথা ‘কাউকে কাউকে’ বলেছিলেন। একথা চাউর হতেই সেই অভিনেতাকে ভয় দেখানো শুরু হয়, ফলে তিনি কয়েক মাসের জন্যে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে চলে গিয়েছিলেন।
সরোজ দত্তের ধরা পড়া এবং পুলিশের হাতে নিহত হওয়ার এই ঘটনা সমসময়ের বেশ কয়েকটি সংবাদ-সাময়িকপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৭১-এর ৩ সেপ্টেম্বর ‘বাংলাদেশ’ পত্রিকায় সরোজ দত্তের নিহত হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত হয় গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি-র মুখপত্র ‘অধিকার’-এও। প্রকাশিত হয়েছিল আনন্দবাজার পত্রিকা, কালান্তর এবং অমৃতবাজার পত্রিকাতেও। অমৃতবাজার পত্রিকায় যে সাংবাদিক সরোজ দত্তের নিহত হওয়ার সংবাদ দিয়েছিলেন তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছিল!
এসবের ফলে পুলিশ মহলেও তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছিল স্বাভাবিকভাবেই। পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নরকম কথা বলা হতে থাকে। কখনও বলা হয় রাজা বসন্ত রায় রোডের বাড়ি থেকে যাকে তারা গ্রেপ্তার করেছিল তাকে ছেড়ে দিয়েছিল পুলিশ কারণ তিনি নাকি সরোজ দত্ত নন! কখনও বলা হয় সরোজ দত্ত আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গিয়েছিলেন! কিন্তু তাঁকে হত্যা করার কথাটি পুলিশ কখনও স্বীকার করেনি। বরং যে খবরটা পুলিশ এবং প্রশাসনের তরফ থেকে চারিয়ে দেওয়া হয়েছিল হয়েছিল তা হলো : সরোজ দত্ত নিখোঁজ! কেরালা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র রাজনকেও প্রথমে পুলিশ নিখোঁজ বলে প্রচার করলেও পরবর্তীকালে জানা নায় যে পুলিশ লক-আপেই তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। স্বভাবতই তথ্য আসল সত্যটিকে গোপন করার লক্ষ্যেই সরোজ দত্ত নিখোঁজ হওয়ার প্রচার করা হয়েছিল।
ফ্যাসিস্ত ইন্দিরা গান্ধির সুযোগ্য অনুসারী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের জমানায় পশ্চিমবঙ্গের খোদ কলকাতায় এই কলঙ্কজনক ঘটনা সংঘটিত হলেও শাসকবর্গ এতটুকু লজ্জাবোধ করেনি। স্বয়ং সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় প্রথমে সরোজ দত্তকে হত্যা করার কথা অস্বীকার করলেও পরে বলতে বাধ্য হয়েছিলেন যে তিনি শুনেছেন কোনও একজন রিপোর্টার গোছের কেউ নিখোঁজ হয়েছেন! সরোজ দত্ত সম্পর্কে এটাই ছিল সমকালের কংগ্রেসি জমানায় সরকারি তথ্য!
সাতাত্তরে ‘বাম’ জমানা কায়েম হওয়ার পর যখন সরোজ দত্তের হত্যার তদন্তের দাবি ওঠে, তখন অকস্মাৎ সরোজ দত্তের ফাইল নিখোঁজ হয়ে যায়! কংগ্রেসি জমানায় স্বয়ং সরোজ দত্ত ‘নিখোঁজ’ আর পরবর্তীতে ‘বাম জমানায়’ সরোজ দত্তের ফাইলটিই নিখোঁজ! কি অদ্ভুত সমাপতন! দৃশ্যত ‘বিরুদ্ধবাদী’দের কি আশ্চর্য ঐক্যমত্য! কুখ্যাত সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের জমানায় পুলিশের তরফে সংগঠিত হত্যা-অত্যাচার-নিপীড়নের তদন্ত ‘বাম’ আমলে হয় মাঝপথে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে, নতুবা সেই তদন্ত রিপোর্ট কোনদিন আলোর মুখদর্শন করেনি। কংগ্রেসের সেই কালো জমানার কোনও কুখ্যাত পুলিশ অফিসার ‘বাম’ জমানায় শাস্তি পায়নি, বরং তাঁদের প্রমোশন হয়েছিল! এভাবেই ‘বাম’ সরকার কংগ্রেস সরকারকের অপকীর্তিকে ধামাচাপা দিয়েছিল। এবছর তো সরোজ দত্ত-হত্যাকাণ্ডের পঞ্চাশতম বার্ষিকী। এই দীর্ঘ পঞ্চাশটি বছর ধরেই সরোজ দত্ত নিখোঁজের তালিকাবন্দি রয়ে গিয়েছেন! এর চাইতে লজ্জাকর ঘটনা আর কী হতে পারে!
এখন তো আবার ‘পরিবর্তন’-এর হাওয়ায় সব লণ্ডভণ্ড হচ্ছে। বিজেপির জয়দ্রথকে পশ্চিমবাংলায় রুখে দিয়ে ‘পরিবর্তন’-এর নেত্রী তো এখন সারাদেশে পরিবর্তনের স্বপ্নের কাণ্ডারী হয়ে উঠেছেন। তাঁর ‘শ্রী’চর্চা আয়তন এবং বহরে ক্রমবর্ধমান হলেও তাতে রামা কৈবর্ত কিম্বা হাসেম শেখদের দিবারাত্রির চিরাচরিত পাঁচালির কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। ২০১১-য় ‘বাম’ জমানার ইতি ঘটিয়ে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর পরিবর্তনের নেত্রী অনেক ভালো ভালো কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত হবে, আনন্দমার্গি হত্যার তদন্ত হবে, বরানগর-কাশিপুর গণহত্যার তদন্ত হবে। তো, কী তদন্ত হয়েছে তা তো আমরা দেখেছি। সরোজ দত্ত হত্যার তদন্তের কথা তো অনুচ্চারিত থেকে গিয়েছিল। আসলে এটাই তো হয়ে থাকে। এটাই তো স্বাভাবিক। সরকার পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে তো আর রক্ত-কান্না-আর্তনাদ জারিত মসনদ এবং এই অচল-অটল রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটে না। এই সিসটেম-কে রক্ষা করাই তো নতুন থেকে নতুনতর সরকারের শপথদীপ্ত ব্রতচর্যার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে ওঠে। বিগত শতকের সত্তরের দশকের ‘আধা-ফ্যাসিস্ত’রা এখন তো ফ্যাসিবিরোধী সংগ্রামে নির্ভরযোগ্য মিত্র হিসেবে গণ্য হয়েছে সরকারি ‘বাম’ নেতৃবৃন্দের কাছে। ক্ষমতার রাজনীতির বিচারে বিজেপির সঙ্গে পরিবর্তনের কাণ্ডারীর বৈরিমূলক দ্বন্দ্ব তো বাস্তব সত্য। সরকারি ‘বাম’পন্থীরা এই সত্যটিকে অস্বীকার করে তাঁদের ক্ষমতা থেকে উৎখাৎকারীদেরই প্রধানতম শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে শত্রুর শত্রুকে মিত্রতার সম্মান দিয়ে ময়দান গরম করেছিলেন গত বিধানসভা নির্বাচনে। কিন্তু বাংলার মানুষ এই সরকারি ‘বাম’ এবং বিজেপির আক্রমণাত্মক প্রচারের যোগ্য জবাব দিয়েছেন বিজেপির জয়দ্রথ রুখে দিয়েই। এই জনসাধারণও তো এখন সরকারি ‘বাম’পন্থীদের কাছে অমিত্র হিসেবে গণ্য হয়েছেন!কিন্তু মজার বিষয় পরিবর্তনের নেত্রীও তো কংগ্রেস কালচারেরই উত্তরসূরি। কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব তো পারিবারিক দ্বন্দ্বের মতোই। মূল কালচারে তো কোনও বিরোধ নেই। অথচ এই কংগ্রেস কালচারকেই তো ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের স্বপ্নে মশগুল সরকারি ‘বাম’পন্থীরা নির্বিচার মান্যতা দিয়েছেন! এই কংগ্রেসের দেখানো পথকেই সম্মান জানিয়েই তাঁরা ক্ষমতায় থাকাকালীন সরোজ দত্তের হত্যার কিনারায় আদৌ উৎসাহী হননি। পরিবর্তনের নেত্রীও কংগ্রেস এবং তাদের উত্তরসুরি ‘সরকারি বাম’পন্থীদের দেখানো পথেই বিচরণ করে সরোজ দত্ত হত্যার তদন্তে নিস্পৃহতা দেখিয়েছেন। নকশালপন্থীরা তো এই রাষ্টব্যবস্থার বিরুদ্ধেই জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন। স্বভাবতই কংগ্রেস, সরকারি ‘বাম’পন্থী এবং বিজেপি তথা রাষ্ট্রশক্তির কাছে ‘সমশত্রু’ বিবেচিত হয়েছেন এই নকশালপন্থীরা। স্বভাবতই কবি-সাংবাদিক এবং নকশালপন্থী রাজনৈতিক নেতা সরোজ দত্তের রাষ্ট্রীয় হত্যা তো রং-বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত শাসকশ্রেণীর কাছেই আকাঙ্ক্ষিত। তাই সরোজ দত্ত-হত্যার তদন্ত পঞ্চাশ বছরেও হয়নি, কোনদিনই হবেনা।কংগ্রেসি জমানার হত্যাকারী পুলিশ ‘বাম’ জমানায় পুরস্কৃত হয়েছিল। ‘বাম’জমানার অত্যাচারী পুলিশ ‘পরিবর্তন’-এর জমানায় পুরস্কৃত হয়েছে। শাসকশ্রেণীর মধ্যেকার শ্রেণীগত ঐক্য তো এটাই। ‘বাম’জমানায় ভিখারি পাশোয়ান নিখোঁজ হয়েছিলেন। সরোজ দত্ত সহ এইসব নিখোঁজদের সন্ধান করতে আরও অনেক অনেক দশক অক্লেশেই অতিক্রান্ত হবে।তবু সরোজ দত্ত-হত্যার তদন্তের দাবি থেকে যাবে। লক্ষকণ্ঠে সেই আওয়াজ ধ্বনি থেকে প্রতিধ্বনিত হবে। বারবার কার্জন পার্ক সংলগ্ন সরোজ দত্তের প্রস্তরীভূত মূর্তিটি তাঁর হত্যাকারী ও রাষ্ট্রব্যবস্থার দিকে আঙুল তুলবে, বলবে :
আমার ছিন্ন শির যদি আজ দুর্গপ্রাকারে
ঝোলে ঝুলুক
তোমরা যারা রইলে এগিয়ে যেও
দ্বিগুণ উদ্যমে
লড়াই-সংগ্রামে ব্রতবদ্ধ লক্ষ লক্ষ মানুষ ‘দ্বিগুণ উদ্যমে’ রাস্তায় নেমে শ্লোগান তুলবে : কমরেড সরোজ দত্ত হত্যার বিচার চাই।—মিটিং, মিছিল, সমাবেশে সম্মিলিত কণ্ঠের উচ্চারিত নিনাদে ধ্বনিত হবে : কমরেড সরোজ দত্ত হত্যার তদন্ত চাই, বিচার চাই, কমরেড সরোজ দত্ত জিন্দাবাদ।

অশোক চট্টোপাধ্যায় : বিশিষ্ট কবি ও প্রাবন্ধিক।
1 Comments
সরোজ দত্ত চিরকাল প্রাসঙ্গিক থাকবেন।