অসুস্থ প্রকৃতি পরিবেশে মানুষ সুস্থ থাকবে কীভাবে?

সন্তোষ সেন
বর্তমান সময়ের দাবি– বিপর্যস্ত প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশকে মেরামত করতে স্থানীয়ভাবে কর্মসূচি গ্রহণ, কিন্তু ভাবনাটা হোক আন্তর্জাতিক। শুধু কয়েকটি গাছ লাগানো বা প্লাস্টিক বর্জন করার মধ্য দিয়ে ষষ্ঠ গণ অবলুপ্তির বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে না। শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, ভাবতে হবে গভীরে গিয়ে বৃহৎ পরিসরে। বাজার সর্বস্ব ভোগবাদের জন্য শুধুই অপ্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদন ও দূষণ সৃষ্টি নয়। এর বিকল্প হিসেবে উঠে আসুক প্রকৃতির বিপাকীয় ফাটলের মেরামত ও তার পুনরুৎপাদন” (reproduction of nature) এর মার্ক্সীয় ভাবনা।
রোগগ্রস্ত প্রাণ প্রকৃতি ও পরিবেশ:
শিল্প বিপ্লবের পর ২০০ বছর ধরে শিল্প পুঁজির স্বার্থে প্রকৃতির ওপর যথেচ্ছ অত্যাচার ও লুণ্ঠনের ফলে লক্ষ লক্ষ কীটপতঙ্গ যেমন ভ্রমর,মৌমাছি, প্রজাপতি,কেঁচো,গেঁরি ,গুগলি, শামুক, জোনাকি ইত্যাদি এবং ডলফিন তিমি, শীল ,শকুন প্রভৃতি বড় প্রাণীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণে। বহু প্রজাতি পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে চিরতরে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণা থেকে উঠে আসা তথ্য বলছে– কমপক্ষে ৮৭ লক্ষ প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ পৃথিবীতে মানুষের প্রাণ ধারণের প্রাথমিক সুরক্ষা কবচ হিসেবে কাজ করে। কিন্তু অপরিকল্পিত ও অবৈজ্ঞানিক ‘উন্নয়নের’ খাতিরে স্থলভূমির শতকরা ৭৫ ভাগ আর সমুদ্রের শতকরা ৬৬ ভাগ স্বাভাবিক পরিবেশ আজ ভয়ঙ্কর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। নির্বিচারে সবুজ বনানী ধ্বংস করে গড়ে ওঠা কংক্রিটের আস্তরণ, বন্যপ্রাণী শিকার, জল ও বায়ুর দূষণ আর এ’সকল অভিঘাতে জলবায়ুর পরিবর্তন, সম্পূর্ণ অজানা অপরিচিত অণুজীবের আক্রমণের কারণে প্রকৃতির ধ্বংস প্রক্রিয়াকে রোধ করে তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা খুবই কম। বরং এইভাবে চলতে থাকলে আগামী পঞ্চাশ বছরে দশ লক্ষ প্রজাতির বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রায় অবশ্যম্ভাবী।
জীবাশ্ম জ্বালানীর অপরিমিত ব্যবহার এবং নির্বিচারে বন ধ্বংসের ফলে গ্রীণ হাউজ গ্যাস ও পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, হিমালয় ও মেরুপ্রদেশের বরফের চাদর গলছে অতি দ্রুত ও অস্বাভাবিক হারে। উচ্চফলনশীল চাষ, কোল্ড ড্রিংক্স ও বোতলবন্দি জলের জন্য ভূগর্ভস্থ জলের ভান্ডার দিন দিন আরো নীচে নামছে। শুধুমাত্র বায়ুদূষণের কারণেই প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় আশি লক্ষ মানুষ মারা যান। ২০১৯ সালে আমাদের দেশে প্রায় সতের লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বায়ুদূষণ জনিত রোগ ভোগের কারণে । বায়ুদূষণের কারণে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের রোগ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর করাল থাবা মাতৃগর্ভে থাকা শিশুদের ও নবজাতকেরদেরও ছাড় দিচ্ছে না, অসময়ে গর্ভপাত ও বিকলাঙ্গ শিশুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ২০১৯ সালে সারা বিশ্বে পাঁচ কোটি নবজাতকের প্রাণ কেড়েছে বায়ুদূষণ, যার অধিকাংশই আবার ভারত সহ এশিয়া মহাদেশে (আগ্রহী পাঠকরা “গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ রিপোর্ট,২০২০” দেখতে পারেন)। প্রকৃতি প্রেমিক রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করে তাঁর ভাষায় বলতে হয়-“প্রকৃতিকে অতিক্রম কিছুদূর পর্যন্ত সয়, তার পর আসে বিনাশের পালা”।
বিশ্ব উষ্ণায়নের থাবা ক্রমশ প্রকট হচ্ছে:
বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে শীতের দেশগুলোতে তাপমাত্রা বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। ২০২০ সালে ভারতের বহু শহরের তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। দেশের একশো কোটি মানুষ অন্তত একমাস গভীর জলসংকটে ভুগেছেন। ২০২১’র জুন-জুলাই মাসে কানাডা, গ্রীস, তুরস্ক, ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় তাপমান ৫০ ডিগ্রীর সীমাও ছাড়িয়ে যায় এবং ক্যালিফোর্নিয়ার এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কয়েকশ হেক্টর জঙ্গল দাবানলের লেলিহান শিখায় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, মারা গেছে কত শত বন্যপ্রাণ, তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই। আর ঠিক একই সময়ে গ্লোবের অন্যপ্রান্তে চীন ও জাপান বন্যায় প্লাবিত হলো। মেরুপ্রদেশের ও হিমালয়ের বরফের চাদর ভেঙে পড়ছে- বরফ গলছে অতি দ্রুত ও অস্বাভাবিক হারে। অতি সম্প্রতি আটলান্টিক মহাসাগরের এক বিশাল বরফের পাহাড় ভেঙে পড়েছে, এর আগেও একাধিকবার এই ঘটনা ঘটেছে। ফলে সমুদ্র জলের উচ্চতা ও উষ্ণতা বাড়ছে চড়চড় করে (বরফ গলা কালো জল সূর্যের তাপকে শোষণ করে অনেক বেশি করে, অথচ সাদা বরফের স্তর এই তাপকে বিকিরিত করে ফেরৎ পাঠিয়ে দেয়)। বঙ্গোপসাগর ও আরব-সাগরের জলস্তরের তাপমাত্রা ২৬.৫ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাওয়ায় আয়লা, ফনি, তকতে, আমফান, ইয়াস-এর মত দানবীয় ঝড় ঝঞ্ঝার সংখ্যা ও তীব্রতা দু’ই বাড়ছে। খরা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বানভাসি, প্লাবনের মত ঘটনা সব একসাথে দেখছি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। অতি সম্প্রতি প্রকাশিত IPCC
( Intergovernmental Panel on Climate Change) এর ষষ্ঠ রিপোর্টে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে– ভূ উষ্ণায়ন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হাত ধরে এইসব চরম প্রাকৃতিক দুর্যোগ দুর্বিপাক দিন দিন বেড়েই চলবে। মুম্বাই চেন্নাই কোচি বিশাখাপত্তনম ও কোলকাতার মত বারোটি শহর জলের তলায় তলিয়ে যাবে আগামী দশ বছরের মধ্যেই। বিজ্ঞানীদের চেতাবনি–এইসব চরম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে যত শীঘ্র সম্ভব কার্বন নিষ্ক্রমণের পরিমান শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে।
“ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক সাউথ এশিয়া” -এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী — সমুদ্রতলের বিবর্তন, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, খরা, কোথাও বা মেঘ ভাঙা বৃষ্টি, বন্যা-প্লাবন, শস্যফলনে গরমিলের মত ক্রমবর্ধমান নানান সমস্যার কারণে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৬.২ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হবেন। এবং বিশ্বজুড়ে ক্লাইমেট রিফিউজি বা পরিবেশগত কারণে বাস্তুচ্যুতি ও প্রবজনের সংখ্যাটা কম করে দেড়শো কোটির ঘরে পৌঁছে যাবে। লন্ডনের “থিঙ্কট্যাংক ওভারসিজ ডেভলপমেন্ট ইনস্টিটিউট” তাদের “The costs for climate change in India” শীর্ষক রিপোর্টে দাবি করেছেন–গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর দরুন ২০৪০ সালের মধ্যে ভারতে দারিদ্র্য ৩.৫ শতাংশ বাড়ার প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে। এই রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, তাপমাত্রা দুই ডিগ্রির বেশি বেড়ে গেলে সমুদ্রতলের উচ্চতাবৃদ্ধি, কৃষিজ ফলনের পরিমান হ্রাসের সাথে সাথে মানুষের স্বাস্থ্যখাতে খরচের পরিমান বেড়ে যাবে বহুগুণে। করোনা ভাইরাসের আলফা- বিটা- ডেল্টা-ওমিক্রণ স্ট্রেনের আবহে গ্লোবাল ওয়ার্মিংকে ভুলে গেলে চলবে না। এর মারণ প্রভাব কিন্তু করোনার থেকে অনেক বেশি দীর্ঘস্থায়ী। টিকা আবিষ্কারের মত তথাকথিত সহজ উপায়ে ভূ-উষ্ণায়নকে কাবু করা সম্ভব হবে না।
জুনোটিক ভাইরাস সহ অন্যান্য রোগ-ভোগ বাড়ছে কেন:
চাষের কাজে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের অপরিমিত ব্যবহারের ফলে চাষের জমিতে ছোট ছোট মাছেদের দল হাওয়া হয়ে গেছে, নদী- জলাশয় ও সমুদ্র-তল দিন দিন বিষাক্ত হয়ে উঠছে। তৈরি হয়েছে ‘ডেডজোন’, বাড়ছে algal bloom (শ্যাওলার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি)। ধ্বংস হয়ে গেছে কয়েক বিলিয়ন উপকারী ব্যাকটেরিয়া, যার ফলে মানুষের দেহে ক্যান্সার সহ নানান অসুখ-বিসুখ বেড়ে চলেছে ক্রমশ। বন ধ্বংস ও পরিবেশ দূষণের কারণে করোনার মতো জুনোটিক ভাইরাসের আক্রমণ বোধহয় মানুষের জীবনে স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হতে চলেছে। অপ্রাকৃতিক ও অবৈজ্ঞানিক খাদ্যাভ্যাসের (পিৎজা, বার্গার, চিপস, কোল্ড-ড্রিংক্স ইত্যাদি প্রভৃতি) কারণে ওবেসিটি ও ব্লাড সুগারের রমরমা। উচ্চফলনশীল হাইব্রিড চাষে ব্যবহৃত অপরিমিত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক চাল, গম, শাক-সব্জি, ফল-মুলের মধ্য দিয়ে খাদ্যশৃঙ্খলে ঢুকে পড়ছে, এই গরল পান করে মানুষ আজ নীলকণ্ঠ হয়ে পড়ছে।
বিখ্যাত গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটিস সেই কবে বলেছিলেন– মানুষের রোগজ্বালা আসলে প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বর্তমান সময়ে সার্স (২০০২), মার্স (২০১২), এভিয়ান ফ্লু আর সোয়াইন ফ্লু যে সংকেত দিয়েছিল, নোভেল করোনাভাইরাস বা সার্স-কোভ২ সেটাই বিশ্ববাসীর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। প্রকৃতির উপর বিজয় ঘোষণাকারী অত্যাধুনিক উন্নত (!) মানবসমাজ প্রকৃতির কিছু ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনুজীবের কাছে কতটা অসহায়। এতদিনে আমরা বুঝতে পারছি যে, ভৌগোলিক অঞ্চলগত বৈচিত্র্য হোক অথবা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শিক্ষা, সম্পদ নির্বিশেষে কারোর রেহাই নেই এইসব প্যাথোজেনদের করাল গ্রাস থেকে। সাম্প্রতিক নানান গবেষণার রিপোর্ট বলছে– আজকের পৃথিবীতে পশু-পাখি থেকে সংক্রমিত জুনোটিক ভাইরাসগুলোই আধুনিক মানুষের সবচেয়ে ক্ষতিকর ও ভয়ঙ্কর শত্রু। বর্তমানে মানুষের মধ্যে দেখা দেওয়া নতুন রোগগুলোর ৭৫ ভাগই জুনোটিক। এর সাথে যোগ করুন, শুষ্ক বরফের (permafrost) নিচে হাজার লক্ষ বছর ধরে চাপা পড়ে থাকা ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার দল বরফ গলে যাওয়ার ফলে মাটি- জল- পশুপাখির মধ্য দিয়ে মানুষের সংস্পর্শে এলে কোন ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে মানবসভ্যতা। বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা দাবি করছে- কয়েক ট্রিলিয়ন অণুজীব
(ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস,প্রটোজয়া, ইত্যাদি) স্তন্যপায়ীদের শরীরে বাস করে। তাদের অনেকেই উপকারী বা বন্ধু হলেও অন্য একদল মানুষের দুর্জন বা শত্রু। উদ্বেগের বিষয়– কৃষিকার্যে কীটনাশক এবং পশুখামারে অ্যান্টিবায়োটিক যথেচ্ছভাবে ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন বন্ধু অনুজীবেরা মারা পড়ছে, অন্যদিকে অনেক ক্ষেত্রেই শত্রু ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার দল ওষুধ ও কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে।
এবার তাই আমাদের স্বীকার করার সময় এসেছে যে, সুস্থ মায়ের সুস্থ সন্তানের মত মানুষের সুস্বাস্থ্য মূলত নির্ভর করে প্রকৃতির সুস্বাস্থ্যের উপরেই এবং সুস্থভাবে জীবনযাপনের জন্য একটা সুস্থ সুন্দর দূষণহীন পৃথিবীর দরকার, যা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। অথচ আজকের অসুস্থ বিপর্যস্ত পৃথিবীতে মানুষের অপরিমেয় অসুস্থতা। অতিমারির দাপটে মানুষের স্বাস্থ্য, জীবন-জীবিকা, অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের আড়ালে কিছু আশার আলো কি দেখা যাচ্ছে? সেই ১৯৭০ সালে স্টকহোম, পরবর্তীক্ষেত্রে কিয়েটো প্রটোকল বা হাল আমলের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি এবং সদ্য হয়ে যাওয়া বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে ( COP 26 ) উচ্চারিত সতর্কবার্তাগুলো কোন দেশের রাষ্ট্রনায়কই সেভাবে কানে তোলেন নি, শুধুই মিথ্যে প্রতিশ্রুতি আর কথার ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন রাষ্ট্রনায়করা। সুইডেনের ক্লাইমেট এক্টিভিস্ট কিশোরী গ্রেটা থানবার্গ তাই সঙ্গত কারণেই বলেছেন --"এইসব সম্মেলনে নীতি নির্ধারকরা হ্যান করেছি, ত্যান করেছির মিথ্যে ভাষণ শোনান আর আমাদের মতো কচি কাঁচাদের ভবিষ্যত নিয়ে ছিনিমিনি খেলেন"। গ্রেটা আরো বলেন--"COP26 is a global greenwashing festival"। আজ উপর্যুপরি প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মহামারী যদি ভয় দেখিয়ে সেইসব সতর্কবার্তা গুলো মানতে বাধ্য করায় তাহলে হয়তো ভবিষ্যতের ভয়ঙ্কর আতঙ্কময় দিনগুলো থেকে রেহাই পাবে মনুষ্য-প্রজাতি সহ তামাম জীববৈচিত্র ও বাস্তুতন্ত্র।
পরিশেষে:
ছিন্নমস্তা উন্নয়ন ও অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং হাঙ্গর বহুজাতিক কর্পোরেটদের লোভ লালসায় জল জঙ্গল জমিন সব লুঠ হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে। এককথায় বিপর্যস্ত প্রকৃতি পরিবেশ আজ আর শুধু পাঠ্যপুস্তকের বিষয় নয়। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনেও তা কড়া নাড়ছে। আজ আর শুধু বনে নয়, আগুন লেগেছে ঘরেও। বুঝে নিতে হবে স্পষ্ট করে– জীব বৈচিত্র, বাস্তুতন্ত্র সহ সমগ্র পরিবেশ তার নিজের মতো করে প্রকৃতি ঠিক গড়ে নেবে যে কোন মূল্যে। পৃথিবীর ইতিহাসে এর আগে পাঁচ পাঁচবার এই ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেই নতুন পৃথিবীতে থাকবো না আমি আপনি।। তাই আজ স্বার্থপরের মতো মানব সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার সব চেষ্টা করে যেতে হবে, শুরু করতে হবে এক্ষুনি।
ইদানিং আমেরিকায় বাইডেন প্রশাসন পরিবেশ মেরামতির বিষয়টিকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন পুঁজির সঞ্চলনকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থেই। গ্রীন টেকনোলজি ও টেকসই উন্নয়নের(!) নাম করে পুঁজির নয়া নয়া বিনিয়োগের রাস্তা খুলে দিতেই। এই আলোচনা অন্য সময় আমরা বিশদে হাজির করবো পাঠকের দরবারে।
রাষ্ট্রপ্রধানদের বাধ্য করতে হবে সমস্ত ধরণের বৈজ্ঞানিক ও যথাযথ পদক্ষেপ অবিলম্বে গ্রহণ করে মানবসভ্যতাকে কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে। যে কোন মূল্যে আমাদের নিজেদের ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটা দূষণমুক্ত সুস্থ সুন্দর নির্মল পৃথিবী চাই। এই বার্তা নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে লক্ষ লক্ষ ছাত্র ছাত্রী, কিশোর কিশোরী, যুবাবাহিনী, বিজ্ঞানী গবেষক, পরিবেশ ও বিজ্ঞান কর্মীরা পথে নেমেছেন বিগত কয়েক বছর ধরেই। কবিগুরুর “বলাই” আজ লক্ষ কণ্ঠে সোচ্চারে আওয়াজ তুলছে– তোমরা বড়রা, প্রাঙ্গরা আমাদের হাতে হাত রাখো, পায়ে পা মেলাও, আমাদের সাথ দাও। তারা রাজপথ কাঁপিয়ে স্লোগান দিচ্ছে–” We need system change, not climate change”। রাষ্ট্রনায়কদের কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙ্গাতে এই দাবি ছড়িয়ে পড়ুক ক্ষেতে খামারে, গ্রাম থেকে গ্রামাঞ্চলে, পাড়া থেকে মহল্লায়, শহর থেকে বিশ্ব দরবারে। পরিবেশ রক্ষার প্রতিটি লড়াই আছড়ে পড়ুক আন্তর্জাতিক আঙিনায়।
সন্তোষ সেন : বিজ্ঞান শিক্ষক, বিজ্ঞান ও পরিবেশ কর্মী।