ঈদ কেবলই মুসলমানদের উৎসব

মীর রাকেশ রৌশান
“রমজানের ওই মাসের শেষে, এলো খুশির ঈদ…” এর বাইরে আমরা কতটা জানি? একই সমাজে হাজার বছর ধরে পাশাপাশি বাস অথচ কোন সভা-সমিতি-অনুষ্ঠানে খালা,দাদি,নানি উচ্চারণ করলে মুখ পানে তাকিয়ে থাকে, বুঝতে পারি অধিকাংশই বুঝতে পারেনি খালা মানে মাসি,দাদি মানে ঠাকুমা,নানি মানে দিদি মা।অথবা হঠাৎ পানি বললেই ধরে নেয় মুসলমান।তারা জাকাত, ফিতরা, সাদকা বুঝবে কেমনে?
অদ্ভুত ভাবে বাংলা ভাষায় শুধু সংস্কৃত ভাষার উপাদান আছে এমনটা নয়।আরবী,ফার্সি,উর্দুও বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে।ভুলে যায় সুলতানী শাসনের অবদান।থাক সে কথা।গোটা পৃথিবী জুড়ে যতটা বাঙালি আছে তার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান অথচ কথায় কথায় বুঝিয়ে দেওয়া হয় মুসলমানরা বাঙালি নয়।এই প্র্যাকটিস চিরাচরিত এমনটা নয়।নবজাগরণের নামে যা ঘটেছে তার ফল স্বরূপ এমনটা হয়ে আসছে সেই কথা অনেকেই মনে করেন।কথায় কথায় কথা ওঠে তাই এটা বলা যায় উর্দু আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যারা যারা রাস্তায় নেমেছিল সেই সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলমানই।ফ্যাসিস্ট এরশাদের বিরুদ্ধে যারা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ করেছিলো তারাও সংখ্যালগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলমান।আমরা যারা পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করি তারা জানি, মুসলমানদের কি অবস্থা।যে মুসলমান কারিগর একদা গোটা বিশ্বের বুকে সুনাম করেছিলো, আজ তারা বেশির ভাগই নির্মাণ শ্রমিক অথবা ভাগচাষী। দেশ থেকে রাষ্ট্র হওয়ার পর আজ তারা রাজনীতি একটা অংশ মাত্র।বাম থেকে ডান উপর থেকে নিচে কার কথা বলি? আর কোন জায়গা থেকে আলোচনা করি? গোটা রমজান জুড়ে চললো ইফতার পার্টি। রাজনৈতিক পতাকা তলে অসহায় মুসলমান। এবং কিছু উচ্ছিষ্ট ভোগী মুসলমানকেও বাবুলের মত নেতার পাশে দেখতে পাই।তা দেখে ইমামের ছেলের মুখটা মনে পড়ে।এটাও আলোচনায় আসা উচিত।ব্লকে ব্লকে ইফতার পার্টির খবর করতে ব্যস্ত থাকে বিভিন্ন মিডিয়া। খবর হয় কারণ এটা রাজনীতির অংশ। খবর হয় কারণ এটা ইনকামের অংশ।শুধু খবর হয়না ঈদের।অদ্ভুত ভাবে ঈদের দিনে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ হিন্দিতে।সেখানে অনেক প্রশ্ন ওঠে।অন্যদিকে পুজোর সময় তিন মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি। যেমন ধরুন, টিভির এক কোণে লেখা থাকে পুজোর আর ৫০ দিন বাকি।উল্টো গণনা শুরু হয়।উৎসবে মেতে ওঠে পশ্চিমবঙ্গ।পুজো হয়ে ওঠে সার্বজনীন, অসাম্প্রদায়িক।স্লোগান ওঠে “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।”মন্ডপের বাইরে সংসদীয় বামপন্থীদের বইয়ের স্টল আরো কত কি…এমনকি ডিসেম্বর মাসে যীশুর কেকও অসাম্প্রদায়িক।মাথায় লাল টুপি পরে রাস্তায় রাস্তায় দেখা যায় ছোট্ট ছোট্ট ফুটফুটে জীবন্ত যীশুদের। কেবল ঈদ হয় মুসলমানদের।মুসলমান প্রান্তিক চাষার ফসল,সেলাই করা জামাকাপড়, নির্মাণ করা আপনার সাধের বাড়ি সাম্প্রদায়িক হয়নি।সাম্প্রদায়িক হয়েছে কিছু শব্দ, চাচা-চাচি,আব্বা…এবং ঈদ,কোরবানি। আর কি বলি?এই ভাবে ঠেলা দিতে দিতে আপনারা মুসলমানদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দিয়েছেন।আর তাদের কোত্থাও যাওয়ার নেই।তাদের চারপাশে কোরান ছাড়া আর কিচ্ছু নেই… হ্যাঁ, আপনারা, আপনারাই এর জন্য দায়ী।
বাঙালিরা নাকি প্রচুর পড়াশোনা করে, তাহলে এতো ইতিহাস বিমুখ কেন?
ফিচার ছবি : লাবণী জঙ্গির আঁকা
মীর রাকেশ রৌশান : কবি,প্রাবন্ধিক ও সমাজকর্মী।
