চিরঘুমের দেশে লেখক-সম্পাদক-প্রাবন্ধিক আব্দুর রাউফ

মোহাম্মদ সাদউদ্দিন
চির ঘুমের দেশে চলে গেলেন কলকাতার বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী , চতুরঙ্গ পত্রিকার সম্পাদক , বহু গ্রন্হ প্রণেতা, কলামনিষ্ট আব্দুর রাউফ। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটায় তিনি আমাদের ছেড়ে গেলেন।কলকাতার পার্কসার্কাস এলাকার ৭ মেহের আলি রোডের বাড়িতেই হুগলির তারকেশ্বর থানা গয়েশপুর গ্রামের ভূমিপুত্র আব্দুর রাউফ আমাদের শোক সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে চলেগেলেন।মৃত্যকালে বয়স হয়েছিল প্রায় ৭৬।এবছরের এপ্রিল মাস থেকেই তিনি অসুস্হ হন ।মেহের আলি রোডের বাড়িতেই তার চিকিৎসা চলছিল। আনন্দবাজারে একসময় তিনি চাকুরি করেছেন। খুব বেশিদিন নয়। তবে রাউফ সাহেবকে জনপ্রিয় করে তোলে সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকার উপসম্পাদকীয়। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে তিনি চতুরঙ্গ পত্রকার সম্পাদক ছিলেন।একসময় কলকাতার পার্কসার্কাস এলাকার ব্রাইট স্ট্রিট থেকে দিনকাল নামে একটা সাময়িক বাংলা ম্যাগাজিন বের হোত বিশিষ্ট সমাজসেবী ও আমানত ফাউণ্ডেশন-এর কর্ণধার মহম্মদ শাহ আলমের পৃষ্ঠপোষকতায়।ঐ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ছিলেন আব্দুর রাউফ, সম্পাদক ছিলেন কবি সৈয়দ হাসমত জালাল, আমি ছিলাম সহসম্পাদক। অনেক কাজ আমি ও জালালদা করতাম।রাউফ সাহেবের সঙ্গে কাজের একটা অভিজ্ঞতা হয়েছিল।এ ছাড়া তখন অনেকটাই কাছাকাছি হয়েছিলাম। আমাকে বলতেন চর্চাটা ছাড়বে না।একদিন পত্রিকার দ্বিতীয় কুসুমের পাতায় যখন লিখতাম , বলতেন চালিয়ে যাও।
আব্দুর রাউফের সঙ্গে আমার শেষ দেখা কলকাতার পার্কসার্কাস ময়দানে এন আর সি বিরোধী প্রতিবাদ্যসভায়।তারপর একটা অটো ভাড়া করে হাফিজুর , আমি ও রাউফ সাহেব গেলাম বেনিয়াপুকুরে হাফজুর ভাইয়ের বাড়িতে।অনেক মত বিনিময় সেদিন হয়েছে। মাঝেমাঝে খোঁজ পেতাম ঘনিষ্ঠ জনদের কাছ থেকে।অসুস্হতার কথা শুনে একদিন গিয়েছিলাম।তখন মোটেই ভালো লাগেনি। না, সব সত্যির বড় সত্যি হল , আজ তিনি একেবারেই আমাদের ছেড়ে গেলেন(৯.০৬.২০২২)। অনেক গ্রন্হ তিনি লিখেছেন।বেশকিছু পড়েছি।তাঁর এই মৃত্যুতে একটি যুগের অবসান হল। মৌলানা আজাদ কলেজ ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্র আব্দুর রাউফের এই চলে যাওয়াটা আমাদের কাছে একটা শূণ্যতা তৈরি করল।
আব্দুর রাউফ রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্হের কয়েকটি হল, স্বাধীনতা-উত্তর পর্বে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান, মুক্তমনের সঙ্কট,বহুমাত্রিক নজরুল, ভারতের বাংলাভাষী মুসলমান, গণতন্ত্র ও সংখ্যালঘু সমস্যা। সরকারি-বেসরকারি নানা পুরস্কারে তিনি ভূষিত হন। সতন্ত্র চিন্তার অধিকারী ছিলেন।