প্রসূতি ও করোনার টিকা

ডাঃ রাজীব মজুমদার :- ১৮ বছরের কম বয়সীদের ভ্যাক্সিন দেওয়া ব্যাপক হারে না হলেও শুরু হয়েছে। তাই আমাকে অনেকেই জিজ্ঞেস করছেন,”আচ্ছা ডাক্তারবাবু, আমার পেটে তো বাচ্চা আছে। আমি কি কোভিডের ভ্যাক্সিন নিতে পারি?”
এই প্রশ্নের উত্তর এক কথায় দেওয়া খুব মুশকিল। তবুও দেওয়ার একটা চেষ্টা করা যেতে পারে।
ডাঃ রাজিব মজুমদার, বিশিষ্ট স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ
Covid in pregnancy
1st wave এর সময় প্রসূতিরা তুলনামূলক ভাবে কম আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু এইবারে আক্রান্ত এর সংখ্যাটা বেশ বেশি। তাই ভ্যাকসিন নেওয়ার কথা চিন্তা করার এটাই উপযুক্ত সময়।
Is it safe during pregnancy?
এই মুহূর্তে আমাদের হাতে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য নেই, যেটাকে সামনে রেখে আমরা বলতে পারি যে এই ভ্যাক্সিন প্রসূতিদের জন্যে পুরোপুরি সেফ।
কিন্তু হ্যাঁ নানা জায়গায় এই প্রেগনেন্সির সময়ে এই ভ্যাক্সিনের সেফটি ও কার্যকারিতা নিয়ে কাজ হচ্ছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হচ্ছে।
তাহলে আদৌ কিসের ভিত্তিতে এখনই ভ্যাক্সিন নেওয়া নিয়ে ভাবনা?
১. এখনো অব্দি আমেরিকায় প্রায় ৯০ হাজার প্রেগনেন্ট মহিলাকে এই ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়েছে। যদিও সেগুলি মূলতঃ mRNA ভ্যাক্সিন। যেমন ফাইজারের ও মডার্রনা।
২. UK তে প্রাথমিক ট্রায়ালে কিন্তু প্রেগনেন্টদের বাদ দেওয়া হয়েছিল। আবার কোন মহিলা ভ্যাক্সিন নিলে তাদের কিছুদিন প্রেগনেন্সি নেওয়া থেকে বিরতও থাকতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সাবধান করা সত্ত্বেও ৬০ জনের কাছাকাছি কনসিভ করেন। ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়েছিল ফাইজার মডার্না বা এস্ট্রাজেনেকার। এইগুলি থেকে যে তথ্য পাওয়া গেছে তা যদিও খুবই প্রাথমিক কিন্তু বেশ ভরসা করার মতন। মা বা বাচ্চার তেমন কোন ক্ষতির খবর এখনও অব্দি নেই।
ভারতীয় তথ্য
বিদেশে ভারতীয় ভ্যাক্সিন কোভিসিল্ডের গোত্রের এস্ট্রাজেনেকার উপর ট্রায়াল চলছে।
ভারত সরকার কী বলছে?
বর্তমানে প্রেগনেন্ট লেডিদের এই ভ্যাক্সিন দেওয়া হচ্ছে না। কারণ কোন প্রেগনেন্ট মহিলাকে ভারতীয় ট্রায়ালের প্রথম তিন ফেজের কোনটাতেই রাখা হয়নি। সরকার বিদেশে যে এস্ট্রাজেনেকার স্টাডি চলছে তার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
ভারতের গাইনেকলজিস্টদের সংগঠন FOGSI কী জানাচ্ছে?
কোভ্যাক্সিন বা কোভীশিল্ডে কোন লাইভ ভাইরাস নেই। এরা মূলতঃ নন রেপ্লিকেটিং ভাইরাস ভ্যাক্সিন। এমনিতে মা বা বাচ্চার এই ভ্যাক্সিন থেকে রোগ ছড়ানোর কোন উপায় নেই। তাহলে মা এর কাছে থেকে পেটের বাচ্চার বা বুকের দুধের মাধ্যমেও বাচ্চার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই প্রেগনেন্সি বা তার পরে পরেই কোন মহিলাকে ভ্যাক্সিন নিতে মানা করা একেবারেই অনুচিত।
CDC ( Centre for Disease Control and Prevention) কী বলছে?
CDC প্রসূতি মায়েদের ভ্যাক্সিন নিতে সাংঘাতিক ভাবে উৎসাহ দিচ্ছে, কিন্তু ফাইনাল ডিসিশন নিতে অনুরোধ করছে পেশেন্ট স্বয়ংকে।
তাহলে এখন আপনি কী করবেন?
১. আমার মতে ভ্যাক্সিন নিন। তবে পারত পক্ষে প্রথম ও শেষ বারো সপ্তাহে বাদ দিয়ে মাঝের সময়টুকুতে।
২.ভ্যাক্সিন নিয়ে নেওয়ার পর কনসিভ করলে বিশেষ চিন্তার ব্যাপার নেই। কিন্তু জেনে শুনে ভ্যাক্সিন নেওয়ার পরে পরেই কনসিভ না করাই ভালো।
৩.ভ্যাক্সিন নিলে ভবিষ্যতে বাচ্চা আসতে অসুবিধে হওয়ার কোন কারণ দেখছি না।
৪.ব্রেস্টফিডিং মায়েদের ভ্যাক্সিন নিতে কোন অসুবিধে নেই। বা ভ্যাক্সিন নিলে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করার কোন প্রয়োজন দেখছি না।
আমার গল্প শেষ। এইবার সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে। হাতে আরো অনেক তথ্য না আসা অব্দি এর থেকে পরিষ্কার ভাষায় আপনাকে আর কেউ বলবে না। সুতরাং ভ্যাক্সিনেশন স্লট বুক করতে লেগে পড়ুন।
বর্তমানে কয়েকদিন হল ভারত সরকার প্রসূতিদের কোভিড ভ্যাক্সিন দেওয়ার পক্ষে সহমত হয়েছে।
1 Comments
তথ্য সমৃদ্ধ লেখা